প্রথমেই বলে নিই, ইসলাম ধর্মে গান,বাজনা, ছবি,সিনেমা,কৌতুক সবই হারাম
...
সুতরাং এগুলো করলে যে ইহকাল, পরকাল সব ই হারাতে হয়... তার বাস্তব প্রমাণ নিচের ঘটনাটা.....
রুপালি জগতের হাতছানি, নায়িকা হিসেবে অভিনয়, তারকা খ্যাতি এবং সেই খ্যাতির স্বর্গ থেকে ভূমির ধূলায় লুটিয়ে পড়া, হারিয়ে যাওয়া এরপর ন্যূনতম মানুষের মতো বেঁচে থাকার লড়াই- এমন চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আসা এক সময়কার নায়িকা সাহিনা আকতার বনশ্রী। তাঁকে নিয়েই আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। নায়িকা বনশ্রী অকপটে বলেছেন নিজেরজীবনের আদ্যোপান্ত।প্রশ্ন : আপনি তো নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে নব্বইয়ের দশকে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন। সেই সময়কার কথা আমাদের বলবেন কি?উত্তর প্রথম ছবি করেই আমি মানুষের চোখে পড়ে যাই। নামধাম হয়। ছবির নাম ‘সোহরাব রুস্তম’।
১৯৯৪ সালের পয়লা জুলাই মুক্তি পায় ছবিটি। পরিচালক ছিলেন মমতাজ আলী। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে এই ছবিতে ভালো কাজ করেছি। তাই হাতে আরো কাজ আসতে শুরু করে। ১৯৯৪ সালের ১৮ নভেম্বর আমার দ্বিতীয় ছবি মুক্তি পায়। নাম ‘মহা ভূমিকম্প’। পরিচালনা করেছেন সুভাষ ঘোষ। আমার সাথে নায়ক ছিলেন মান্না ভাই ও আমিনখান। ১৯৯৮ সালের ২৭ নভেম্বর ‘নেশা’ ছবিটি মুক্তি পায়। সাইদুর রহমান সাইদের পরিচালনায় অভিনয় করেছি আমি, রুবেল ভাই আর অঞ্জু ঘোষ। বুঝতেই পারছেন, তখন আমাকে মানুষ চিনতে শুরু করেছে।প্রশ্ন :আপনি বড় হয়েছেন কোথায়?উত্তর : আমার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে।
আমার আসল নাম সাহিনা আকতার, খুবছোটবেলায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা আমাদের ঢাকায় নিয়ে আসেন। মাদারীপুরের কথা কিছু মনে নেই। ঢাকার মোহম্মদপুরেই বড় হয়েছি। বেগম নূরজাহান বালিকা বিদ্যালয়ে পড়তাম। ছোটবেলা থেকে গান করতাম আর প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল নায়িকা হব। কোনো পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যখন যেতাম তখন কেউ বলত সুচরিতার মতো দেখতে, কেউবলত এ তো দেখি নায়িকা নতুনের মতো, আবার কেউ বলত দিতির মতো, শাবানার মতো। আসলে ছোটবেলা থেকেই মাথায় ঢুকে যায় আমাকে নায়িকা হতে হবে।
কিন্তু ১২-১৩ বছর বয়সেই আমার বিয়ে হয়ে যায়।প্রশ্ন : এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হলো কীভাবে?উত্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির একজন ছাত্র আমাদের পাশের বাড়িতে থাকতেন। তার নাম ছিল শ্যামল কুমার কণ্ঠ । ভাইয়া আমাকে প্রায়ই চিঠি দিতেন, আমি পাত্তা দিতাম না। একদিন দেখি শ্যামল ভাইয়ের ঘরে অনেক মানুষ চিৎকার করছে। পরে জানতে পারলাম শ্যামল ভাই গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে চাচ্ছিলেন। সন্ধ্যায় শ্যামল ভাইয়ের মা সহ আমাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত। বাবার হাতে ছেলেকে তুলে দিয়ে তার মা বলেন, আমার ছেলেকে আপনার হাতে তুলে দিলাম আপনি ওকে মুসলমান বানিয়ে নিন। ছেলের মৃত্যুর চেয়ে মুসলমান ছেলে অনেক ভালো। সেদিনই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। শ্যামল কুমার কণ্ঠ ধর্ম ও নাম বদলে হয়ে গেলেন মাসুদ চৌধুরী। এটা ৯২ বা ৯৩ সালের ঘটনা।;প্রশ্ন : তাহলে আপনি নায়িকা হয়েছেন বিয়ের পর?;উত্তর : ;হ্যাঁ।
বিয়ের পর নায়িকা হওয়ার চিন্তা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আবার। স্বামীর সম্মতিতে যোগাযোগ শুরু করলাম এফডিসিতে। পরিচয় হলো এফটি প্রোডাকশনের মালিক মোহম্মদ ফারুক ঠাকুরের সঙ্গে। তিনি আমাকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেললেন। কিন্তু আমার বিয়ে হয়েছে কথাটি গোপন রেখে কাজে নামতে হলো কারণ বিবাহিত মেয়েরা সিনেমায় জনপ্রিয় হতে পারে না। ‘সোহরাব রুস্তম’ ছবির পরিচালক মমতাজ আলী বললেন, ‘নতুন নায়িকা, ভালো নাচ লাগবে, অভিনয় লাগবে, এত বড় বাজেটের ছবি, টাকা ফেরত পাব তো?’ ফারুক ঠাকুর বললেন, ‘আমার ছবি, আমার টাকা, আমি এই নায়িকা দিয়েই ছবি করব।’আমার চলচ্চিত্র জীবনের শুরুটা শুভ ছিল না। বাধা হয়ে দাঁড়াল পেটের সন্তান। যখন সব ঠিক হচ্ছিল তখন আমর পেটে সন্তান। আমি তো কিছুতেই এই সময় বাচ্চা নিতে রাজি নই। কিন্তু ডাক্তার বললেন, আমার বাচ্চা পেটে বড় হয়ে গেছে।
এখন নষ্ট করলে ভবিষ্যতে আমার আর বাচ্চা হবে না। তাই বাধ্য হয়েই মা হলাম। পৃথিবীতে এলো আমাদেরকন্যা সন্তান শ্রাবন্তি শ্যামল বৃষ্টি। সবকিছু গোপন করে আবার ছুটে গেলাম এফডিসিতে।আমার প্রথম ছবি ‘সোহরাব রুস্তম’ এ নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই। তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। শুটিং চলাকালেই আমার নাম ছড়িয়ে পড়ে এফডিসিতে। অনেক জায়গাথেকে নতুন ছবির অফার আসতে লাগল।সব প্রযোজক আমাকে নিয়ে ছবি বানাতে চাইতেন কারণ আমি চরিত্র অনুযায়ী সাজতে পারতাম। কিন্তু আবারও বাধা এলো আমার চলচ্চিত্র জীবনে।
এবার বাধা দিলেন এফটি প্রডাকশনের মালিক সেই মোহম্মদ ফারুক ঠাকুর।<strong>প্রশ্ন : </strong>কেন? উনি কেন বাধা হয়ে দাঁড়ালেন? উনিই তো আপনাকে প্রথম সুযোগ করে দিলেন?উত্তর হ্যাঁ ‘সোহরাব রুস্তম’ ছবির প্রযোজক মোহম্মদ ফারুক ঠাকুরই আমাকে এনেছিলেন। কিন্তু তিনিই আমাকে আর কিছুতেই অন্য ছবিতে কাজ করতে দিতে চাচ্ছিলেন না। প্রথম থেকেই তিনি আমাকে ভালো গাইড করছিলেন। কিন্তু আমি এসেছি নায়িকা হতে। সবার ছবিতে কাজ করতে না পারলে আমার ক্যারিয়ারের কী হবে? ফারুক ঠাকুর আমাকে বললেন, এফটি প্রডাকশন বছরে ৪টা ছবি করবে আর প্রত্যেক ছবিরই নায়িকা হবো আমি। তিনি স্বপ্ন দেখালেন, বললেন, আমি শুধু নায়িকা থাকব না। এফটি প্রডাকশনের আগামীতেযেসব ছবি হবে তার লাভের অর্ধেক আমিও পাব। শুরু হলো আমার চলচ্চিত্রের নতুন যাত্রা।প্রশ্ন :প্রযোজক ফারুক ঠাকুর কি কথা রেখেছিলেন?উত্তর হ্যাঁ উনি কথা রেখেছিলেন। ‘নিষ্ঠুর দুনিয়া’ ছবির মাধ্যমে প্রযোজনা সংস্থা এফটি প্রডাকশনের মালিক মোহম্মদ ফারুক ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবি শুরু করলাম। ওই ছবির নায়ক ছিলেন রুবেল ভাই। ১৯৯৫ সালে আমরা চুক্তিবদ্ধ হলাম।
চুক্তিতে লেখা ছিল, চুক্তির ছয় মাসের মধ্যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আমার টাকা ফেরতদেবে অন্যথায় আমি এফটি প্রডাকশনের আরো দুটি ছবি ‘আলো মতি প্রেম কুমার’ ও ‘মধুমালা মদন কুমার’সহ চলমান ছবি ‘নিষ্ঠুর দুনিয়া’র অর্ধেক মালিকানা পাব।এগিয়ে চলল ‘নিষ্ঠুর দুনিয়া’ ছবির কাজ। প্রায় আশি ভাগ শুটিংও শেষ করলাম। রুবেল ভাইয়ের সাথে এর আগে ‘নেশা’ ছবিটি করায় উনার সাথে কাজটা ভালো হচ্ছিল। যেহেতু আমিনায়িকা, আমাকে দেখতে সুন্দর লাগতে হবে তাই প্রায় প্রতিদিন হোটেল সোনার গাঁ অথবাশেরাটনে সাঁতার কাটতাম। কিন্তু বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি ফারুক ঠাকুর।ফারুক ঠাকুর বললেন, সুইমিং করার সময় অনেক মানুষ লবিতে হাঁটাহাঁটি করে, এটা উনারভালো লাগছে না। কিন্তু আমাকে তো সুইমিং করতেই হবে নয় তো মোটা হয়ে যাব। ফারুক ঠা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন