বাতিল ফির্কারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার চালায় সূরা দুখানের লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা নাকি লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান তথা শবে বরাতকে বুঝানো হয়নি, বরং শবে কদরকে বুঝানো হয়েছে। আসুন আমরা উক্ত আয়াত শরীফের বিশ্ব বিখ্যাত তফসীর সমূহ থেকে স্পষ্ট ভাবে জেনে নিই লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে কি বুঝানো হয়েছে।
বিভিন্ন তাফসীর থেকে সূরা আদ দুখানের তাফসীর উল্লেখ করা হলোঃ
============================================
শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
(১) সূরা আদ দুখান-এর ليلة مباركة এর পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “সেই মুবারক রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”
এখানে فيها তথা মুবারকপূর্ণ রাতের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরে উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة رضى الله تعالى هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد.
অর্থ: “বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফায়ছালার রাতই হচ্ছে- অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে সামনে এক বৎসরে যাবতীয় কিছুর ফায়ছালা করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। এমনকি হজ্জ পালনকারীদের তালিকাও করা হয় সেই অর্ধ শা’বানের রাতে। ওই রাতে যার যার ভাগ্যে যা কিছু লেখা হয় তা থেকে কোন কমতিও করা হয়না এবং কোন কিছু বেশিও করা হয় না।( তাফসীরে কুরতুবী-এর ১৬তম খ-ের ১২৬/১২৭ পৃষ্ঠা)
(২) এ প্রসঙ্গে তাফসীরে উল্লেখ আছে-
(فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) يفصل (كل امر حكيم) ... وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه هى ليلة النصف من شعبان يقوم فيها امر السنة وتنسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد
অর্থ: “ওই মুবারক তথা বরকতপূর্ণ রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ যাবতীয় বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়। বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যতালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। ওই তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয়না অর্থাৎ কোনরূপ পরিবর্তন হয় না (‘তাফসীরে লুবাব’-এর ১৭তম খ-ের ৩১০-৩১১ পৃষ্ঠা)
(৩) প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত তাফসীর ‘তাফসীরে গারায়িবুল কুরআন ওয়া রাগায়িবুল কুরআন, হাশিয়ায়ে জামিউল বয়ান’-এর ৩০তম জুযের ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وعن عكرمة رضى الله تعالى عنه انها ليلة البراءة
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ যে রাতে অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয় তা হচ্ছে বরাতের রাত। তথা শবে বরাতে।” (তাফসীর তাবারী, ৩০ খ-)
(৪) বিশ্বখ্যাত তাফসীর আরো উল্লেখ আছে-
يبدأ فى استنساخ ذالك من اللوح المحفوظ فى ليلة البراءة ويقع الفراغ فى ليلة القدر.
অর্থ: “লাওহে মাহফূয-এর প্রত্যেকটি বিষয়ের অনুলিপি বা ভাগ্যলিপি লেখা শুরু হয় শবে বরাতের রাত্রে এবং শেষ হয় শবে ক্বদরের রাত্রে।” (“তাফসীরে কুরতুবী”-এর ১৬তম খ-ের ১২৮ পৃষ্ঠা)
(৫) তাফসীরে আরো উল্লেখ আছে-
وقيل ليلة البراءة ابتدئ فيها انزال او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, লাইলাতুল মুবারাকা অর্থ হচ্ছে লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত। উক্ত রাত্রিতে কুরআন শরীফ ও অন্যান্য সবকিছু অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়। অথবা ওই রাত্রিতে একই সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ লাওহে মাহফুয থেকে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ করা হয়।” (“তাফসীরে আবী সুয়ূদ”-এর ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠা)
(৬) উক্ত কিতাবের উক্ত পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
وقيل يبدأ فى استنساخ ذلك من اللوح فى ليلة البراءة ويقع الفراغ فى ليلة القدر.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, লাওহে মাহফুয থেকে যা কিছু নাযিল হয় তার সবকিছুই লিপিবদ্ধ শুরু করা হয় শবে বরাতে। আর সেই ভাগ্যলিপি সম্পাদন তথা কার্যকরী করার জন্য পেশ করা হয় শবে ক্বদরে।” (“তাফসীরে আবী সুয়ূদ”-এর ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠা)
(৭) এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত “তাফসীরে তাবারী”তে উল্লেখ আছে-
وقال اخرون بل هى ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “মুফাস্সিরীনে কিরামগণের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, লাইলাতুল মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত।” (“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠা)
“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
“ওই রাতেই সমস্ত হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”
(৮) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
زعم بعضهم كعكرمة وغيره انها ليلة النصف من شعبان ... قالوا وسمى ليلة البراءة ايضا وليلة الصك
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের মধ্য থেকে অনেকেই উল্লেখ করেছেন, অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। যেমন, প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যান্য আরো অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বর্ণনা করেছেন যে, লাইলাতুম মুবারকাই হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। তারা আরো বলেন, লাইলাতুম মুবারাকাকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। এবং লাইলাতুছ ছক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয়। (“তাফসীরে গারায়িব হাশিয়া জামিউল বয়ান” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৮১-৮২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৩ খ-, ১১২ পৃষ্ঠা)
(৯) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
انها ليلة النصف من شعبان قاله عكرمة .. وروى عن عكرمة ان ذلك فى ليلة النصف من شعبان.
অর্থ: “লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে। যা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ফায়ছালার রাত্রি হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত। (“তাফসীরে যাদুল মাসীর”-এর ৭ম খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায়)
(১০) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة وغيره الليلة المباركة هى النصف من شعبان.
অর্থ: “হযরত ইকরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের থেকে বর্ণিত আছে যে, লাইলাতুম মুবারাকা হচ্ছে ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে বরাত। (“তাফসীরে আল মুর্হারারুল ওয়াজিয” কিতাবের ৫ম খ-ের ৬৮ পৃষ্ঠায়)
(১১) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
او البراءة معطوف على القدر اى ليلة البراءة وهى ليلة النصف من شعبان فانها تسمى الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة الرحمة وتسميتها بليلة البراءة والصك لانه تعالى يكتب لعبادة المؤمنين براءة فى هذه الليلة كذا فى الكشاف.
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত। যা ক্বদরের তথা মর্যাদাপূর্ণ রাতের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শাবানের রাতকেই লাইলাতুল মুবারাকা, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাত এবং লাইলাতুর রহমত নামে নামকরণ করা হয়েছে।”
আর লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল ছক বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে এজন্যই নামকরণ হয়েছে। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মু’মিন বান্দাদের ব্যাপারে এই রাত্রিতে মুক্তির ফায়ছালা করে থাকেন। এরূপভাবে তাফসীরে কাশশাফেও বর্ণিত আছে। (“তাফসীরে হাশিয়ায়ে শিহাব”-এর ৮ম খ-ের ২ পৃষ্ঠা)
(১২) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
او البراءة ابتدأ فيها انزاله او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.
অর্থ: “অথবা লাইলাতুল মুবারাকা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত তথা শবে বরাত। এই রাতেই লাওহে মাহফুয থেকে কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া শুরু হয়। অথবা এই শবে বরাতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে এক সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয়।” (“তাফসীরে বায়যাবী শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ২৮৭ পৃষ্ঠা)
(১৩) সকল মাদ্রসায় পঠিত কিতাব “তাফসীরে জালালাইন শরীফ”- উল্লেখ আছে-
او ليلة نصف من شعبان
অর্থ: “অথবা লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবানের তথা ১৫ই শাবানের রাত।” (“তাফসীরে জালালাইন শরীফ” ৪১০ পৃষ্ঠা)
এই উক্তির সমর্থনে উক্ত তাফসীরের ৪১০ পৃষ্ঠার ২৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
قوله ليلة النصف من شعبان هو قول عكرمة وطائفة ومنها ان ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الرحمة وليلة الصك.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এটা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে। আর এই ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের ৪টি নাম রয়েছে। যেমন, লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত, লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত, লাইলাতুর রহমত এবং লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারনের রাত।
(১৪) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
اخرج ابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم من طريق محمد بن سوقة عن عكرمة رضى الله تعالى عنه فيها يفرق من كل امر حكيم قال فى ليلة النصف من شعبان يبرم امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم ولاينقص منهم احد.
অর্থ: “হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ ইবনে সাওক্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবার হযরত ইক্রামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থাৎ, “ওই মুবারক রাত্রে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে।” তিনি এই ফায়ছালার রাত দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে উল্লেখ করেছেন। আর এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে এবং ওই রাতেই মৃত ও জীবিতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সেই রাতেই হাজীদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। ওই তালিকা থেকে কোনরূপ কমবেশী করা হয়না। (“তাফসীরে দুররে মানছূর”-এর ৬ষ্ঠ খ-ের ২৬ পৃষ্ঠা)ৎ
(১৫) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
قال بعض المفسرين المراد من الليلة المباركة ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الاول الليلة المباركة لكثرة خير وبركتها على العاملين ... الثانى ليلة الرحمة والثالث ليلة البراءة والرابع ليلة الصك.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে অনেকেই লাইলাতুল মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাতকে। এবং ইহার তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে। প্রথমত: লাইলাতুল মুবারকা তথা বরকতের রাত্রি। কেননা এই বরকতের রাত্রিতে যারা আমল করে থাকেন তথা ইবাদত-বন্দিগী করে থাকেন তাদের জন্য অনেক খায়ের বরকত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: লাইলাতুর রহমত তথা রহমতের রাত্রি।
তৃতীয়ত: লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত্রি।
চতুর্থত: লাইলাতুছ ছক তথা চেক প্রদানের রাত। (“তাফসীরে রহুল বয়ান” কিতাবের ৮ম খ-ের ২৫তম জুযের ৪০২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর এর কিতাবে উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة وجماعة: هى ليلة النصف من شعبان وتسمى ليلة الرحمة والليلة المباركة وليلة الصك وليلة البراءة
অর্থ: হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি জামায়াত বলেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত। ১৫ শা’বানের রাতকে লাইলার্তু রহমত তথা রহমতের রাত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুছ ছক্ক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত হিসেবেও নাম করণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে। (“তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ১৩তম খ-ের ১১০-১১১ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, অধিকাংশ অনুসরনীয় মুফাসসিরীণগণ উনারা ‘সূরা দুখানে’ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ অর্থাৎ শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ‘শবে বরাত’ কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। অতএব শবে বরাতের বিরোধিতা করা বা শবে বরাতকে অস্বীকার করা মূলত কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত
বিভিন্ন তাফসীর থেকে সূরা আদ দুখানের তাফসীর উল্লেখ করা হলোঃ
============================================
শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
(১) সূরা আদ দুখান-এর ليلة مباركة এর পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “সেই মুবারক রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”
এখানে فيها তথা মুবারকপূর্ণ রাতের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরে উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة رضى الله تعالى هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد.
অর্থ: “বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফায়ছালার রাতই হচ্ছে- অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে সামনে এক বৎসরে যাবতীয় কিছুর ফায়ছালা করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। এমনকি হজ্জ পালনকারীদের তালিকাও করা হয় সেই অর্ধ শা’বানের রাতে। ওই রাতে যার যার ভাগ্যে যা কিছু লেখা হয় তা থেকে কোন কমতিও করা হয়না এবং কোন কিছু বেশিও করা হয় না।( তাফসীরে কুরতুবী-এর ১৬তম খ-ের ১২৬/১২৭ পৃষ্ঠা)
(২) এ প্রসঙ্গে তাফসীরে উল্লেখ আছে-
(فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) يفصل (كل امر حكيم) ... وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه هى ليلة النصف من شعبان يقوم فيها امر السنة وتنسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد
অর্থ: “ওই মুবারক তথা বরকতপূর্ণ রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ যাবতীয় বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়। বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যতালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। ওই তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয়না অর্থাৎ কোনরূপ পরিবর্তন হয় না (‘তাফসীরে লুবাব’-এর ১৭তম খ-ের ৩১০-৩১১ পৃষ্ঠা)
(৩) প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত তাফসীর ‘তাফসীরে গারায়িবুল কুরআন ওয়া রাগায়িবুল কুরআন, হাশিয়ায়ে জামিউল বয়ান’-এর ৩০তম জুযের ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وعن عكرمة رضى الله تعالى عنه انها ليلة البراءة
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ যে রাতে অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয় তা হচ্ছে বরাতের রাত। তথা শবে বরাতে।” (তাফসীর তাবারী, ৩০ খ-)
(৪) বিশ্বখ্যাত তাফসীর আরো উল্লেখ আছে-
يبدأ فى استنساخ ذالك من اللوح المحفوظ فى ليلة البراءة ويقع الفراغ فى ليلة القدر.
অর্থ: “লাওহে মাহফূয-এর প্রত্যেকটি বিষয়ের অনুলিপি বা ভাগ্যলিপি লেখা শুরু হয় শবে বরাতের রাত্রে এবং শেষ হয় শবে ক্বদরের রাত্রে।” (“তাফসীরে কুরতুবী”-এর ১৬তম খ-ের ১২৮ পৃষ্ঠা)
(৫) তাফসীরে আরো উল্লেখ আছে-
وقيل ليلة البراءة ابتدئ فيها انزال او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, লাইলাতুল মুবারাকা অর্থ হচ্ছে লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত। উক্ত রাত্রিতে কুরআন শরীফ ও অন্যান্য সবকিছু অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়। অথবা ওই রাত্রিতে একই সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ লাওহে মাহফুয থেকে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ করা হয়।” (“তাফসীরে আবী সুয়ূদ”-এর ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠা)
(৬) উক্ত কিতাবের উক্ত পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
وقيل يبدأ فى استنساخ ذلك من اللوح فى ليلة البراءة ويقع الفراغ فى ليلة القدر.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, লাওহে মাহফুয থেকে যা কিছু নাযিল হয় তার সবকিছুই লিপিবদ্ধ শুরু করা হয় শবে বরাতে। আর সেই ভাগ্যলিপি সম্পাদন তথা কার্যকরী করার জন্য পেশ করা হয় শবে ক্বদরে।” (“তাফসীরে আবী সুয়ূদ”-এর ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠা)
(৭) এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত “তাফসীরে তাবারী”তে উল্লেখ আছে-
وقال اخرون بل هى ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “মুফাস্সিরীনে কিরামগণের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, লাইলাতুল মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত।” (“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠা)
“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
“ওই রাতেই সমস্ত হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”
(৮) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
زعم بعضهم كعكرمة وغيره انها ليلة النصف من شعبان ... قالوا وسمى ليلة البراءة ايضا وليلة الصك
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের মধ্য থেকে অনেকেই উল্লেখ করেছেন, অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। যেমন, প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যান্য আরো অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বর্ণনা করেছেন যে, লাইলাতুম মুবারকাই হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। তারা আরো বলেন, লাইলাতুম মুবারাকাকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। এবং লাইলাতুছ ছক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয়। (“তাফসীরে গারায়িব হাশিয়া জামিউল বয়ান” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৮১-৮২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৩ খ-, ১১২ পৃষ্ঠা)
(৯) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
انها ليلة النصف من شعبان قاله عكرمة .. وروى عن عكرمة ان ذلك فى ليلة النصف من شعبان.
অর্থ: “লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে। যা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ফায়ছালার রাত্রি হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত। (“তাফসীরে যাদুল মাসীর”-এর ৭ম খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায়)
(১০) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة وغيره الليلة المباركة هى النصف من شعبان.
অর্থ: “হযরত ইকরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের থেকে বর্ণিত আছে যে, লাইলাতুম মুবারাকা হচ্ছে ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে বরাত। (“তাফসীরে আল মুর্হারারুল ওয়াজিয” কিতাবের ৫ম খ-ের ৬৮ পৃষ্ঠায়)
(১১) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
او البراءة معطوف على القدر اى ليلة البراءة وهى ليلة النصف من شعبان فانها تسمى الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة الرحمة وتسميتها بليلة البراءة والصك لانه تعالى يكتب لعبادة المؤمنين براءة فى هذه الليلة كذا فى الكشاف.
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত। যা ক্বদরের তথা মর্যাদাপূর্ণ রাতের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শাবানের রাতকেই লাইলাতুল মুবারাকা, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাত এবং লাইলাতুর রহমত নামে নামকরণ করা হয়েছে।”
আর লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল ছক বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে এজন্যই নামকরণ হয়েছে। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মু’মিন বান্দাদের ব্যাপারে এই রাত্রিতে মুক্তির ফায়ছালা করে থাকেন। এরূপভাবে তাফসীরে কাশশাফেও বর্ণিত আছে। (“তাফসীরে হাশিয়ায়ে শিহাব”-এর ৮ম খ-ের ২ পৃষ্ঠা)
(১২) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
او البراءة ابتدأ فيها انزاله او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.
অর্থ: “অথবা লাইলাতুল মুবারাকা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত তথা শবে বরাত। এই রাতেই লাওহে মাহফুয থেকে কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া শুরু হয়। অথবা এই শবে বরাতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে এক সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয়।” (“তাফসীরে বায়যাবী শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ২৮৭ পৃষ্ঠা)
(১৩) সকল মাদ্রসায় পঠিত কিতাব “তাফসীরে জালালাইন শরীফ”- উল্লেখ আছে-
او ليلة نصف من شعبان
অর্থ: “অথবা লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবানের তথা ১৫ই শাবানের রাত।” (“তাফসীরে জালালাইন শরীফ” ৪১০ পৃষ্ঠা)
এই উক্তির সমর্থনে উক্ত তাফসীরের ৪১০ পৃষ্ঠার ২৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
قوله ليلة النصف من شعبان هو قول عكرمة وطائفة ومنها ان ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الرحمة وليلة الصك.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এটা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে। আর এই ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের ৪টি নাম রয়েছে। যেমন, লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত, লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত, লাইলাতুর রহমত এবং লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারনের রাত।
(১৪) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
اخرج ابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم من طريق محمد بن سوقة عن عكرمة رضى الله تعالى عنه فيها يفرق من كل امر حكيم قال فى ليلة النصف من شعبان يبرم امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم ولاينقص منهم احد.
অর্থ: “হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ ইবনে সাওক্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবার হযরত ইক্রামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থাৎ, “ওই মুবারক রাত্রে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে।” তিনি এই ফায়ছালার রাত দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে উল্লেখ করেছেন। আর এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে এবং ওই রাতেই মৃত ও জীবিতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সেই রাতেই হাজীদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। ওই তালিকা থেকে কোনরূপ কমবেশী করা হয়না। (“তাফসীরে দুররে মানছূর”-এর ৬ষ্ঠ খ-ের ২৬ পৃষ্ঠা)ৎ
(১৫) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
قال بعض المفسرين المراد من الليلة المباركة ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الاول الليلة المباركة لكثرة خير وبركتها على العاملين ... الثانى ليلة الرحمة والثالث ليلة البراءة والرابع ليلة الصك.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে অনেকেই লাইলাতুল মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাতকে। এবং ইহার তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে। প্রথমত: লাইলাতুল মুবারকা তথা বরকতের রাত্রি। কেননা এই বরকতের রাত্রিতে যারা আমল করে থাকেন তথা ইবাদত-বন্দিগী করে থাকেন তাদের জন্য অনেক খায়ের বরকত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: লাইলাতুর রহমত তথা রহমতের রাত্রি।
তৃতীয়ত: লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত্রি।
চতুর্থত: লাইলাতুছ ছক তথা চেক প্রদানের রাত। (“তাফসীরে রহুল বয়ান” কিতাবের ৮ম খ-ের ২৫তম জুযের ৪০২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর এর কিতাবে উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة وجماعة: هى ليلة النصف من شعبان وتسمى ليلة الرحمة والليلة المباركة وليلة الصك وليلة البراءة
অর্থ: হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি জামায়াত বলেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত। ১৫ শা’বানের রাতকে লাইলার্তু রহমত তথা রহমতের রাত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুছ ছক্ক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত হিসেবেও নাম করণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে। (“তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ১৩তম খ-ের ১১০-১১১ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, অধিকাংশ অনুসরনীয় মুফাসসিরীণগণ উনারা ‘সূরা দুখানে’ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ অর্থাৎ শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ‘শবে বরাত’ কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। অতএব শবে বরাতের বিরোধিতা করা বা শবে বরাতকে অস্বীকার করা মূলত কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন