ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশ সফর নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল হর্ষ কাক্কর।
তার পুরো লেখাটি তুলে ধরা হলো-
.
সম্পর্কের বাধা অপসারণ ও পরস্পরের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর চাং ওয়ানকুয়ান সম্প্রতি কাঠমান্ডু ও কলম্বো সফর করেছেন। এই aআগে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়নের যে চেষ্টা করছে তাতে দিল্লি বাধ সাধলে চীন ‘পাল্টা আঘাত’ হানবে। তাদের ভাষায়, দক্ষিণ এশিয়াকে (পাকিaস্তান বাদে) ভারত নিজ বাড়ির পেছনের উঠানের মতো মনে করে। এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে বলে চীন মনে করে, মিডিয়াগুলো এমন ইংগিতও দেয়। অন্যদিকে, আশপাশের এলাকায় চীনের সামরিক উপস্থিতি ভারতের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
.
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল রাওয়াত গত সপ্তাহে নেপাল ও বাংলাদেশ সফর করছেন। বিদেশে নিজের প্রথম সফরের পক্ষে বলতে গিয়ে তিনি জানান, আগে প্রতিবেশী। তার সফরগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সফরের পরপরই তিনি নেপালে যান। আর, তার ঢাকা সফর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ঠিক আগে।
.
শ্রীলংকায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় ভারত ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির হামবানতোতা বন্দরের ৮০ শতাংশ মালিকানার অধিকারী এখন চীন। জিবুতি ও গোয়াদরে বন্দর নির্মাণের কাজ শেষের পথে। আর হামবানতোতা বন্দরের কাজ শেষ হলে চীনের ‘মুক্তার মালা’ (স্ট্রিং অব পার্ল) কৌশল হবে একটি বাস্তবতা। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও নেপালের সঙ্গে চীনের জোরদার সামরিক সম্পর্ক ওই বৃত্তটিকে পূূর্ণ করবে। তাই প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। আর সে কারণে শেখ হাসিনার আসন্ন সফর এত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো এক ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নেপাল মাধেসিদের নিয়ে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই জনগোষ্ঠী তাদের দাবি থেকে পিছিয়ে আসতে নারাজ। দেশটির কোয়ালিশন সরকারের অবস্থা নড়বড়ে। ভারত চাচ্ছে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে। সেখানে পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে গত সপ্তাহে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করা হয়েছে। ভারত ও চীনের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করছে নেপাল সরকার। এই প্রথমবারের মতো নেপাল ও চীন যৌথ সামরিক মহড়া সম্পন্ন করেছে।
.
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে; বিদেশী, ব্লগার ও সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে। সেখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মূলত প্রধান দুই দলের মধ্যে। শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সরকার ভারতপন্থী। তারা বাংলাদেশের মাটিতে কোন ভারত-বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপকে প্রশ্রয় দেবে না। ভারতের সেনাপ্রধানকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হাসিনা। খালেদা জিয়া ও তার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) সবসময় ঠিক এর উল্টোটি করেছে। তাদের ভারত-বিরোধিতা প্রকাশ্য। তাই নির্বাচনের আগে প্রতিরক্ষাসহ বেশ কিছু চুক্তি করিয়ে নিতে চাচ্ছে ভারত। এর লক্ষ্য নির্বাচনের পর সরকার পরিবর্তন হলেও যেন চীন দেশটিতে সহজে প্রবেশ করতে না পারে।
.
নেপালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পালা দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য একটি সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। তারা রাজনৈতিক বিরোধে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকলেও পর্দার আড়াল থেকে কাজ করছে। এই সংকটের সময়ে দেশটিকে স্থিতিশীলতা দিচ্ছে তারাই। দেশের মধ্যে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের দাবি উঠলেও তা তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাই নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্তের জন্য সেনাপ্রধানের সহমতের প্রয়োজন রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের একক কোন ক্ষমতা নয়।
বাংলাদেশে সেনাবাহিনী সবসময় পর্দার আড়াল থেকে নীরব শাসকের ভূমিকা পালন করছে। কিছু সময়ের জন্য তারা ক্ষমতাও দখল করে। তারা দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন রাস্তায় প্রকাশ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন সেনাবাহিনী শান্ত অবস্থা ফিরিয়ে আনে। নিরাপত্তা, সেনাবাহিনীর জন্য কেনাকাটা, ঘাঁটিগুলোর জন্য বরাদ্দ, যৌথ প্রশিক্ষণ এবং সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ সমন্বয়ের মতো বড় বড় সব সিদ্ধান্ত মূলত সেনাপ্রধানের সিদ্ধান্ত। তাই তাদের সেনাপ্রধানের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই কেবল দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো কার্যকর হওয়া সম্ভব।
.
এই সন্ধিকালে দেশগুলো সফরে গিয়েছেন জেনারেল রাওয়াত। রাওয়াত একজন গোর্খা অফিসার। তিনি নেপালের ভাষা ও সামাজিক রীতি সম্পর্কে সুঅভিজ্ঞ। তিনিই পারেন প্রতিবেশি দেশের সেনাপ্রধানের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি ও দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের পক্ষে ভারতের যুক্তিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে। নেপালকে চীনের কাছ থেকে দূরে রাখাই হবে এর লক্ষ্য।
.
ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিসহ দেশটির সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে। বর্তমানে দেশটি সামরিক সরঞ্জামের ব্যাপারে চীনের ওপর নির্ভরশীল। ২০০২ সালে খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি কাঠামোগত চুক্তি হয়। এখন বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা ক্রয়খাত সম্প্রসারণ করে ভারত ও রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী। ভারতীয় সেনা প্রধান তার বাংলাদেশী প্রতিপক্ষকে ভারতের সঙ্গে লেনদেনের সুবিধাগুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। সামরিক ইস্যুগুলো নিয়ে সবচেয়ে ভালো আলোচনা হতে পারে সামরিক বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে। তাছাড়া ভারতের কোন আধিপত্যবাদী পরিকল্পনা নেই বলে প্রতিপক্ষকে আশ^স্ত করা গেলে তা পরোক্ষভাবে আসন্ন সফরে সবচেয়ে কাক্সিক্ষত চুক্তিগুলো স্বাক্ষরের পথ পরিষ্কারে ভূমিকা রাখবে। অভিন্ন হুমকি মোকাবেলাসহ নিরাপত্তা সহযোগিতা দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়াবে। তা সরকারগুলোর মধ্যেও জোরদার সহযোগিতা সৃষ্টি করবে।
এসব দেশে চীন যে পরিমাণ অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করেছে তার সঙ্গে সে কোনভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারবে না – এ কথা ভারত জানে। তবে সে এও বুঝতে পেরেছে যে এসব দেশকে সামরিক চুক্তি থেকে অর্থনীতিকে আলাদা রাখার পরামর্শ দেয়া যায়। দুই সেনা প্রধান যদি আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার বন্ধন গড়ে তুলতে পারেন তাহলে তা অনেক ফলদায়ক হবে। এর মাধ্যমে শ্রীলংকার হামবানতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা যাবে। দিল্লি সরকার যখন [শেখ হাসিনার] সফরটি অনুমোদন করে তখন এ বিষয় তার এর মাথায় ছিলো কিনা তা আমার জানা নেই। যদি থাকে তাহলে এই সফর ভারতের জন্য হবে লাভজনক। বিশেষ করে যেসব দেশে সেনাবাহিনী নিরবে হলেও প্রভাশালী ভূমিকা পালন করে সেখানকার পররাষ্ট্র নীতিতে সামরিক কূটনীতি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এটি কোন ব্যতিক্রম না হয়ে একটি প্রথাসিদ্ধ ব্যবস্থা হওয়া উচিত।
ভারত পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলেও খেলার তাসটি মূলত তাদের সেনা প্রধানের হাতে। তিনি যেন ভারত সরকারকে নীতি নির্দেশনা দেবেন। ভারতের কোন সরকার পাকিস্তান সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা চালাতে ইচ্ছুক নয়। দু’দেশের আলোচনা সবসময় হোচট খাওয়ার এটি একটি কারণ। কিন্তু দুই সেনাপ্রধান যদি উপমহাদেশের বাইরে কোথাও বসে কোনরকম সমঝোতায় পৌছাতে পারেন তাহলে তা হবে পরিবর্তন সূচনার একটি ঘোষণা। দু’দেশের সরকার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কারণ, এই প্রথম পাকিস্তান একজন সেনাপ্রধান পেয়েছে যিনি কট্টর ভারত-বিরোধী নন।
.
লেখক ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল
সাউথ এশিয়ান মনিটর.
তার পুরো লেখাটি তুলে ধরা হলো-
.
সম্পর্কের বাধা অপসারণ ও পরস্পরের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর চাং ওয়ানকুয়ান সম্প্রতি কাঠমান্ডু ও কলম্বো সফর করেছেন। এই aআগে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়নের যে চেষ্টা করছে তাতে দিল্লি বাধ সাধলে চীন ‘পাল্টা আঘাত’ হানবে। তাদের ভাষায়, দক্ষিণ এশিয়াকে (পাকিaস্তান বাদে) ভারত নিজ বাড়ির পেছনের উঠানের মতো মনে করে। এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে বলে চীন মনে করে, মিডিয়াগুলো এমন ইংগিতও দেয়। অন্যদিকে, আশপাশের এলাকায় চীনের সামরিক উপস্থিতি ভারতের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
.
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল রাওয়াত গত সপ্তাহে নেপাল ও বাংলাদেশ সফর করছেন। বিদেশে নিজের প্রথম সফরের পক্ষে বলতে গিয়ে তিনি জানান, আগে প্রতিবেশী। তার সফরগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সফরের পরপরই তিনি নেপালে যান। আর, তার ঢাকা সফর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ঠিক আগে।
.
শ্রীলংকায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় ভারত ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির হামবানতোতা বন্দরের ৮০ শতাংশ মালিকানার অধিকারী এখন চীন। জিবুতি ও গোয়াদরে বন্দর নির্মাণের কাজ শেষের পথে। আর হামবানতোতা বন্দরের কাজ শেষ হলে চীনের ‘মুক্তার মালা’ (স্ট্রিং অব পার্ল) কৌশল হবে একটি বাস্তবতা। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও নেপালের সঙ্গে চীনের জোরদার সামরিক সম্পর্ক ওই বৃত্তটিকে পূূর্ণ করবে। তাই প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। আর সে কারণে শেখ হাসিনার আসন্ন সফর এত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো এক ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নেপাল মাধেসিদের নিয়ে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই জনগোষ্ঠী তাদের দাবি থেকে পিছিয়ে আসতে নারাজ। দেশটির কোয়ালিশন সরকারের অবস্থা নড়বড়ে। ভারত চাচ্ছে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে। সেখানে পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে গত সপ্তাহে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করা হয়েছে। ভারত ও চীনের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করছে নেপাল সরকার। এই প্রথমবারের মতো নেপাল ও চীন যৌথ সামরিক মহড়া সম্পন্ন করেছে।
.
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে; বিদেশী, ব্লগার ও সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে। সেখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মূলত প্রধান দুই দলের মধ্যে। শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সরকার ভারতপন্থী। তারা বাংলাদেশের মাটিতে কোন ভারত-বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপকে প্রশ্রয় দেবে না। ভারতের সেনাপ্রধানকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হাসিনা। খালেদা জিয়া ও তার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) সবসময় ঠিক এর উল্টোটি করেছে। তাদের ভারত-বিরোধিতা প্রকাশ্য। তাই নির্বাচনের আগে প্রতিরক্ষাসহ বেশ কিছু চুক্তি করিয়ে নিতে চাচ্ছে ভারত। এর লক্ষ্য নির্বাচনের পর সরকার পরিবর্তন হলেও যেন চীন দেশটিতে সহজে প্রবেশ করতে না পারে।
.
নেপালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পালা দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য একটি সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। তারা রাজনৈতিক বিরোধে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকলেও পর্দার আড়াল থেকে কাজ করছে। এই সংকটের সময়ে দেশটিকে স্থিতিশীলতা দিচ্ছে তারাই। দেশের মধ্যে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের দাবি উঠলেও তা তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাই নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্তের জন্য সেনাপ্রধানের সহমতের প্রয়োজন রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের একক কোন ক্ষমতা নয়।
বাংলাদেশে সেনাবাহিনী সবসময় পর্দার আড়াল থেকে নীরব শাসকের ভূমিকা পালন করছে। কিছু সময়ের জন্য তারা ক্ষমতাও দখল করে। তারা দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন রাস্তায় প্রকাশ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন সেনাবাহিনী শান্ত অবস্থা ফিরিয়ে আনে। নিরাপত্তা, সেনাবাহিনীর জন্য কেনাকাটা, ঘাঁটিগুলোর জন্য বরাদ্দ, যৌথ প্রশিক্ষণ এবং সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ সমন্বয়ের মতো বড় বড় সব সিদ্ধান্ত মূলত সেনাপ্রধানের সিদ্ধান্ত। তাই তাদের সেনাপ্রধানের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই কেবল দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো কার্যকর হওয়া সম্ভব।
.
এই সন্ধিকালে দেশগুলো সফরে গিয়েছেন জেনারেল রাওয়াত। রাওয়াত একজন গোর্খা অফিসার। তিনি নেপালের ভাষা ও সামাজিক রীতি সম্পর্কে সুঅভিজ্ঞ। তিনিই পারেন প্রতিবেশি দেশের সেনাপ্রধানের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি ও দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের পক্ষে ভারতের যুক্তিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে। নেপালকে চীনের কাছ থেকে দূরে রাখাই হবে এর লক্ষ্য।
.
ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিসহ দেশটির সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে। বর্তমানে দেশটি সামরিক সরঞ্জামের ব্যাপারে চীনের ওপর নির্ভরশীল। ২০০২ সালে খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি কাঠামোগত চুক্তি হয়। এখন বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা ক্রয়খাত সম্প্রসারণ করে ভারত ও রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী। ভারতীয় সেনা প্রধান তার বাংলাদেশী প্রতিপক্ষকে ভারতের সঙ্গে লেনদেনের সুবিধাগুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। সামরিক ইস্যুগুলো নিয়ে সবচেয়ে ভালো আলোচনা হতে পারে সামরিক বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে। তাছাড়া ভারতের কোন আধিপত্যবাদী পরিকল্পনা নেই বলে প্রতিপক্ষকে আশ^স্ত করা গেলে তা পরোক্ষভাবে আসন্ন সফরে সবচেয়ে কাক্সিক্ষত চুক্তিগুলো স্বাক্ষরের পথ পরিষ্কারে ভূমিকা রাখবে। অভিন্ন হুমকি মোকাবেলাসহ নিরাপত্তা সহযোগিতা দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়াবে। তা সরকারগুলোর মধ্যেও জোরদার সহযোগিতা সৃষ্টি করবে।
এসব দেশে চীন যে পরিমাণ অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করেছে তার সঙ্গে সে কোনভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারবে না – এ কথা ভারত জানে। তবে সে এও বুঝতে পেরেছে যে এসব দেশকে সামরিক চুক্তি থেকে অর্থনীতিকে আলাদা রাখার পরামর্শ দেয়া যায়। দুই সেনা প্রধান যদি আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার বন্ধন গড়ে তুলতে পারেন তাহলে তা অনেক ফলদায়ক হবে। এর মাধ্যমে শ্রীলংকার হামবানতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা যাবে। দিল্লি সরকার যখন [শেখ হাসিনার] সফরটি অনুমোদন করে তখন এ বিষয় তার এর মাথায় ছিলো কিনা তা আমার জানা নেই। যদি থাকে তাহলে এই সফর ভারতের জন্য হবে লাভজনক। বিশেষ করে যেসব দেশে সেনাবাহিনী নিরবে হলেও প্রভাশালী ভূমিকা পালন করে সেখানকার পররাষ্ট্র নীতিতে সামরিক কূটনীতি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এটি কোন ব্যতিক্রম না হয়ে একটি প্রথাসিদ্ধ ব্যবস্থা হওয়া উচিত।
ভারত পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলেও খেলার তাসটি মূলত তাদের সেনা প্রধানের হাতে। তিনি যেন ভারত সরকারকে নীতি নির্দেশনা দেবেন। ভারতের কোন সরকার পাকিস্তান সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা চালাতে ইচ্ছুক নয়। দু’দেশের আলোচনা সবসময় হোচট খাওয়ার এটি একটি কারণ। কিন্তু দুই সেনাপ্রধান যদি উপমহাদেশের বাইরে কোথাও বসে কোনরকম সমঝোতায় পৌছাতে পারেন তাহলে তা হবে পরিবর্তন সূচনার একটি ঘোষণা। দু’দেশের সরকার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কারণ, এই প্রথম পাকিস্তান একজন সেনাপ্রধান পেয়েছে যিনি কট্টর ভারত-বিরোধী নন।
.
লেখক ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল
সাউথ এশিয়ান মনিটর.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন