নিজস্ব প্রতিবেদক:
হাড়-গোড়, খুড়, শিং, লেজ কিংম্বা রক্ত উচ্ছিষ্ট হিসেবে যার স্থান হয় আবর্জনার স্তুপে। কিন্তু কজনই বা জানেন গবাদি পশুর এসব অঙ্গ-প্রতঙ্গের সঙ্গে কোটি কোটি ডলার চলে যাচ্ছে ডাস্টবিনে। হাজারীবাগের কিছু উদ্যোমী মানুষ ময়লার স্তুপ থেকে গবাদি পশুর এসব উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করে বিদেশে রফতানী করছেন।
বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশকেও রক্ষা করছেন দূষণের হাত থেকে। পশুর বর্জ্য রফতানীতে সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পেলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো বলে মনে করছেন এর রফতানীকারকরা।
গবাদি পশুর গোশত আর চামড়ার কদর সবার কাছেই কিন্তু এছাড়া বাকি সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই ফেলে দেয়া হয় উচ্ছিষ্ট হিসেবে। অথচ এখানে যা উচ্ছিষ্ট সেগুলোই বিদেশিরা কিনে নিচ্ছে উৎকৃষ্ট হিসেবে। এই যেমন পশুর পাকস্থলি একটু ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দিলেই এর দাম হয়ে যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ ডলার।
পবিত্র কুরবানীর পশুর হাড় দিয়ে তৈরি হয় জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ক্যাপসুলের কভার, নাড়ি দিয়ে অপারেশনের সুতা, রক্ত দিয়ে পাখির খাদ্য, চর্বি দিয়ে সাবান, পায়ের খুর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ক্লিপ ইত্যাদি। অর্থাৎ গরু-খাসীর সব অংশই মানুষের কোনো না কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়। পশু জবাইয়ের পর একটি মাঝারি আকারের গরু থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি হাড় ফেলে দেয়া হয়। আর এই হাড় সংগ্রহ করে প্রতিদিন ব্যবসা হয় অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। নাড়িভুঁড়ি বিক্রি হয় আরো অন্ততঃ ১২ লাখ টাকার। ব্যবসায়ীরা জানান, হাড়গোড় দিয়ে ওষুধ, বোতাম আর ঘর সাজানোর নানা উপকরণ তৈরি হয়। এছাড়া নানা দেশেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয় নাড়িভুঁড়ি।
আন্তর্জাতিক বাজারে পিত্ত থলিরও রয়েছে বিশাল চাহিদা। এদিয়ে তৈরি হয় জীবন রক্ষাকারী ঔষধ। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকেও আসতে পারে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এসব চলে যাচ্ছে ডাস্টবিনে।
এর পাশাপাশি হাড়, খুড়, দাঁত, শিং আর রক্ত দিয়ে তৈরি হয় ক্যাপসুলের কভার, জেলোটিন, ক্যামেরার ফিল্ম, সিরিস কাগজ আর পশুপাখির খাবার।
এবার সারা দেশে ১.৫ কোটি পশু কুরবানি হলে প্রতিটি গড়ে ১০ ডলার হিসেবে পাকস্থলি থেকেই অর্জিত হতে পারে প্রায় ১৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতি এ ব্যাপারে গবেষণা করে বলেছে, কুরবানি ঈদে শুধু ঢাকা শহরেই উৎপাদিত হয় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য। কুরবানির বর্জ্য হলো হাড়, শিং, নাড়িভুঁড়ি, রক্ত-চর্বি, পিত্ত এবং চামড়ার ওয়েস্টেজ অংশ। এসব উচ্ছিষ্ট শতভাগ রফতানিযোগ্য। গরুর হাড় দিয়ে তৈরি হয় জীবন রক্ষাকারী ক্যাপসুলের কভার। নাড়ি দিয়ে তৈরি হয় অপারেশনের সুতা। চর্বি দিয়ে সাবান। এভাবেই পশুবর্জ্য মানুষের কোনো না কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলো রফতানি করলে শতকোটি টাকা আয় করা সম্ভব শুধু কুরবানি ঈদকেন্দ্রিক।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, কুরবানির বর্জ্য দিয়ে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করা যাবে। দেশে মাটির আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া উর্বরতা বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশু উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলছে, ছাগল, ভেড়া, মহিষের উচ্ছিষ্টাংশ ব্যবহার করে দেশের পশু ও মৎস্য খাদ্যের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। খামারিরা প্রতি কেজি প্রোটিন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় আমদানি করছে। অথচ কুরবানিসহ পশুর উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য ব্যবহার করে প্রোটিন উৎপাদন করা সম্ভব। এতে প্রতি কেজি প্রোটিন উৎপাদনে খরচ হবে ৩ থেকে ৪ টাকা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ঠিকমত সংরক্ষণ এবং জনসচেতনা তৈরি করতে পারলে চামড়া শিল্পের মত শুধু পশুবর্জ্য দিয়েই আরেকটি শিল্প দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন