শনিবার, ২১ মে, ২০১৬

পবিত্র বরাত উনার রাতের ইবাদত-বন্দেগী করার উত্তম তারতীব।

পবিত্র বরাত উনার রাতের ইবাদত-বন্দেগী করার উত্তম তারতীব প্রসঙ্গে
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
পবিত্র বরাত উনার রাতে জাগ্রত থেকে বিভিন্ন প্রকারের ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে উৎসাহ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পবিত্র লাইলাতুল বরাত-এ ইবাদত-বন্দেগীর ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “এই রাতের দু’ রাকায়াত নামায বনী ইসরাইলের জনৈক বুযূর্গের চারশত বৎসরের ইবাদতের চেয়েও অধিক ফযীলতপূর্ণ এবং এ রাতের ইবাদত-বন্দেগী বিশটি কবুল হজ্জের ছওযাব, বিশ বছর রোযার ছওয়াব সমতুল্য। তবে এ রাতে কত রাকায়াত নামায পড়তে হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও মূল মূল ও খাছ খাছ ইবাদতের মাধ্যমে এ রাত জাগরণ করলে সমস্ত ইবাদতেরই ছওয়াব পাওয়া যায়। যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো- প্রথমে জামায়াতের সহিত ইশার নামায পড়ে নিতে হবে। অতঃপর সুন্নত নামাযের পর পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ। (যেহেতু পবিত্র মীলাদ শরীফ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পাঠ করে থাকেন। যা নাজাত ও শাফায়াত লাভের উত্তম মাধ্যম। কাজেই এর গুরুত্ব সর্বাধিক। অতঃপর দোয়া করতে হবে। অতঃপর পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনার নামায: লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে কত রাকায়াত নামায পড়তে হবে এ ব্যাপারে যদিও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনার ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে। অতঃপর ছলাতুছ তাসবীহ নামায পড়বেন: ছলাতুছ তাসবীহ-এর নামায পড়বেন, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা হয়। এর নিয়ম জানার জন্য আল বাইয়্যিনাত-এর ৯৯তম সংখ্যার সুওয়াল-জওয়াব দেখুন। অতঃপর যিকির-আযকার করবেন: যার দ্বারা দিল ইছলাহ ও ইতমিনান হয়। অতঃপর কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবেন: এ রাতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবেন, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে আফজল। অতঃপর সম্ভব হলে কবর যিয়ারত করবেন: যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। কেননা শবে বরাত-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছেন ও দোয়া করেছেন। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারা রাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবে না। সম্ভব হলে সুন্নতের আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোনো কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে। অতঃপর তাহাজ্জুদ নামায পড়বেন: তাহাজ্জুদের নামায পড়বেন, যা দ্বারা আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য হাছিল হয়। অতঃপর মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবেন: পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ উম্মতে হাবীবীর জন্য সবচেয়ে বড় ইবাদত ও নাযাতের মূল কারণ। যারা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। দোয়া-ইস্তিগফার করবেন: মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু’হাত তুলে মনের চাহিদানুযায়ী দোয়া করবেন, যার কারণে আল্লাহ পাক খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবেন, যার মাধ্যমে বান্দার সমস্ত গুনাহখতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ পবিত্র পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়। দান-ছদকা ও গরিব-মিসকীনদের খাওয়ানো: গরিব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবেন ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবেন, যার দ্বারা ‘হাবীবুল্লাহ’ হওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, পবিত্র লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে যদি কেউ গরিব-মিসকীন বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে খাওয়াতে চাই তবে এ ক্ষেত্রে হালুয়া-রুটি কিংবা গোশত-রুটি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলে তা হবে খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এ সুন্নতের খেয়ালে যদি কেউ তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে গরিব-মিসকীন ও অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি, গোশত-রুটি, গোশত-পোলাও, কোর্মা-পোলাও, মোরগ-পোলাও, তেহারী, গোশত-খিচুরী ইত্যাদি আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোনো প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই খাছ সুন্নত আদায়ের সাথে সাথেই অশেষ বারাকাত, ফুয়ুযাত, নিয়ামত, ফযীলত ও নাজাতের কারণ হবে। উল্লেখ্য যে, অনেক স্থান দেখা যায় যে, তারা ছুবহে সাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলত, মুনাজাত যে কোনো সময়েই করা যায়। তবে বরাত-উনার রাত্রে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্তই। এরপর বরাত উনার রাত্র অবশিষ্ট থাকে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, “ফযর বা ছুবহে সাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদের বিভিন্ন দোয়া কবুল করেন।” অতএব, সকলের উচিত মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে সাদিকের পূর্বেই করা। অতঃপর ছুবহে ছাদিকের পূর্বে পরের দিনের রোযার জন্য সাহরী খেয়ে নিবে। কারণ এই রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য এত অধিক যে, জিন-ইনসান তো বটেই এমনকী পশু-পাখি, গর্তের পিপিলিকা, সমুদ্রের মাছেরাও এ পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনার রোযা রেখে থাকে। কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত এ পবিত্র রাত্রটি যথাযথভাবে পালন করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি হাছিল করা। আমীন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন