বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

মহান মুক্তিযুদ্ধকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের (RUSSIA) ভূমিকা..........

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত
ইউনিয়নের নৌ বাহিনীর ভূমিকা
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে শেষের
দিকে এসে আমেরিকা হস্তক্ষেপ
করতে চেয়েছিল।কারন তখন
পাকিস্থানের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে
পড়েছিল।এই রকম অবস্থাতে মার্কিন
নৌ বাহিনীর সাহায্য অপরিহার্য হয়ে
পড়েছিল তাদের জন্য যেহেতু তাদের
মধ্যে অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক ছিল।
এই রকম সময় আমেরিকা অত্যন্ত গোপনে
চীনের সহযোগীতাও কামনা করে।
১৯৭১ সালে জুলাই মাসের দ্বিতীয়
সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্র
ী কিসিন্জার চীনের বেইজিং এ
আসেন।তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী
কিসিন্জারকে অনেকটা এই রকম
জানায়
"যদি ভারত নিজেদের এই যুদ্ধে
উপিস্থিতি বজায় রাখে তাহলে তা
আরো খারাপের দিকে যাবে।যাই
হোক আমরা পাকিস্থানের সাথে
রয়েছি এবং ভারত যদি এই যুদ্ধ থেকে
সরে না যায় তাহলে আমরা বসে
থাকবো না।"
চীনের প্রধানমন্ত্রীর এই কথা শুনে
কিসিন্জারও জানিয়ে দেয় তারাও
পাকিস্থানকে সমর্থন করে এই ইস্যুতে।
এরপরে সিআইএ মার্কিন
প্রেসিডেন্টকে জানায় ভারতের
প্রধানমন্ত্রী চীন হতে কোন আক্রমনের
আশা করছে না।যদি চীন আক্রমন করে
তাহলে ভারতের সামরিক শক্তি সম্পূর্ন
ধ্বংস হয়ে যাবে কারনভারতকে সেই
সময় তিন দিক মোকাবেলা করতে হবে।
এই রিপোর্ট হাতে পেয়ে ডিসেম্বর
মাসের ৯ তারিখ তৎকালীন মার্কিন
প্রেসিডেন্ট নিক্সন ক্যারিয়ার
ইউএসএস এন্টারপ্রাইজকে বঙ্গোপসাগরে
পাঠায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে
চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে হুমকি
প্রদান করা যাতে ভারত পূর্ব
পাকিস্থান হতে নিজেদের সরিয়ে
নেয়।
ডিসেম্বরের ১০ তারিখ মার্কিন
প্রেসিডেন্ট নিক্সন পররাষ্ট্রমন্ত্র
ী কিসিন্জারকে নির্দেশ দেয়
চীনকে জানাতে চীনা সৈন্যদের
ভারতের সীমান্তের নিকট হাজির
করতে।
কিন্তু এই সময় চীন ভয় পেল ভারতের
সীমানার নিকট সৈন্য পাঠালে
সোভিয়েত পাল্টা ব্যবস্থা নিতে
পারে। যেহেতু ভারতের সাথে
সোভিয়েতের খুব ভাল সম্পর্ক।ঠিক তখন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনকে আশ্বস্ত
করে যদি সোভিয়েত কোন পদক্ষেপ
গ্রহন করে তাহলে আমেরিকা চীনকে
রক্ষা করবে।
এই দিকে সোভিয়েতের গোয়েন্দা
সংস্থা তাদের সরকারকে রিপোর্ট
করে ব্রিটেনের একটি ক্যারিয়ার
ভারতের সীমানার নিকট আসছে।এই
রিপোর্ট হাতে পাওয়ার সাথে
সাথেই সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি বহর
ভারতের দিকে পাঠিয়ে দেয়।
তারা বঙ্গোপসাগরের এসে পৌছায়
এবং ব্রিটেনের ক্যারিয়ারকে
নজরদারিতে রাখে। কিন্তু ব্রিটেন
যদি সোভিয়েতকে আক্রমন করে বসে
তখন সোভিয়েতেন তেমন কিছুই করার
থাকত না।কারন তাদের জাহাজের
সংখ্যা কম ছিল।জাহাজ এবং শক্তি
বাড়াতে সেই সময় ক্রুজার,ডেষ্ট্রয়ার
এবং পারমানবিকশক্তিচালিত
সাবমেরিন [যেগুলো কিনা এন্টি শিপ
মিসাইল দ্বারা সজ্জিত ছিল]
পাঠানো হয় সোভিয়েতের নৌ ঘাঁটি
থেকে।এই রকম শক্তিশালী নৌ বহর
দেখে ব্রিটেন এগুনোর সাহস পায় নি
এবং মাদাগাস্কারের দিকে চলে
যায়।
এই দিকে ভারতের জলসীমার দিকে
এগিয়ে আসছে ক্যারিয়ার ইউএসএস
এন্টারপ্রাইজ এবং এ্যাসাল্ট শিপ
ইউএসএস ত্রিপোলি।তখন সোভিয়েতের
সেই বহরের কমান্ডার জানায় "আমাকে
নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মার্কিন এই
বহর কোনভাবে যেন ভারতের
জলসীমার দিকে এগুতে না পারি।সেই
নির্দেশ অনুযায়ী তাদের আমি
জাহাজদ্বারা ঘিরে ফেলি এবং
এন্টি শিপ মিসাইল এন্টারপ্রাইজের
দিকে তাক করে রাখি।তাদের পথ
অবরুদ্ধ করে রাখি।তাদের করাচি,
চট্রগ্রাম এবং ঢাকার দিকে এগুতে দেয়
নি।"
কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের
জাহাজের এন্টি শিপ মিসাইলগুলোর
রেঞ্জ ছিল ৩০০ কিঃমিঃ।যা কিনা
মার্কিন ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করার জন্য
পর্যাপ্ত রেঞ্জ ছিল না। তাই সেই সময়
ওই বহরের কমান্ডার তাদের
পারমানবিক সাবমেরিনকে পানির
উপরে ওঠার নির্দেশ দেন।যাতে তা
স্যাটেলাইট হতে দেখা যায়।
সোভিয়েত চেয়েছিল আমেরিকা
দেখুক প্রয়োজনে সকল পদক্ষেপ নেওয়া
হবে।
ঠিক এই সময় সোভিয়েতের নৌ বহর
মার্কিন ক্যারিয়ারের একটি মেসেজ
ইন্টারসেপ্ট করতে সক্ষম হয়।মেসেজটি
অনেকটা এই রকম ছিল "স্যার,আমরা
অনেক দেরি করে ফেলেছি। এখানে
সোভিয়েতের পারমানবিকশক্তিচ
ালিত সাবমেরিন আছে এবং অনেক
যুদ্ধজাহাজ নিয়ে এসেছে"।
মার্কিন এই পরিকল্পনার সাফল্য
অনেকটা চীনের উপর নির্ভর করছিল।
অর্থ্যা চীন যদি ভারতকে না আক্রমন
না করে তাহলে পুরো পরিকল্পনা
ভেস্তে যাবে।তাই আমেরিকা
বারবার চীনকে ভারত আক্রমন করা এবং
নিরাপত্তা দেওয়ার অঙ্গীকার
করেছিল।
কিন্তু চীন ভয় পেয়ে গেল সোভিয়েত
হস্তক্ষেপ করবে এই ক্ষেত্রে যদি তারা
ভারত আক্রমন করে।এই দিকে ভারতের
প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিল যদি
চীন আক্রমন করে তাহলে ভারতের
আকাশে সোভিয়েতের বিমান ওঠবে।
এরপর আর মার্কিন ক্যারিয়ার
বাংলাদেশের দিকে এগুনোর সাহস
পায় নি।আর এভাবেই আমাদের মহান
মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের নৌ
বাহিনী আমাদের বিজয় অর্জনের পথ
অনেকটা পরিষ্কার করে দিয়েছিল।শুধু
বাংলাদেশকেও নয়, সেদিন
ভারতকেও রক্ষা করেছিল
সোভিয়েতের নৌ বাহিনী।তাই
আমরা সারা জীবনেও সোভিয়েতের
এই অবদানের কথা ভুলবো না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন