বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

ইসরাইল এর সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ বিমান ধ্বংসের রেকর্ডটি কার? অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না কিন্তু তার চাইতে বেশি মানুষ বোধহয় বিশ্বাস করতে পারবেন না যে এই রেকর্ডটি একজন বাংলাদেশি পাইলটের।

অবিশাস্য
হলেও সত্য যে আমাদের দেশের ভূলে
যাওয়া এই বীর সন্তান হলেন গ্রুপ
ক্যাপ্টেন(অবঃ) সাইফুল আযম কাশেম। শুধু
এই রেকর্ড ই নয় সাইফুল আযম চারটি ভিন্ন
দেশের হয়ে জঙ্গি বিমান চালান
একমাত্র ব্যাক্তি এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ
২২ জন জীবিত পাইলট এর একজন । তিনি
একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে
মার্কিন বিমান বাহিনি কর্তৃক
সন্মাননা প্রাপ্ত। ”টপগান” পাইলট
হিসেবে এই সন্মাননা প্রাপ্ত বীর
যোদ্ধা আমাদের মিডিয়াতে
অনেকটাই অপরিচিত।
---------------------------------------------
-----------------------------
জুন ৬ , ১৯৬৭
↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓↓
আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে । তৎকালীন
পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে
ডেপুটেশনে আসা গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল
আজম পশ্চিম ইরাকের এক বিমান
ঘাটিতে অবস্থান করছে । অনেকটা
ভোজবাজির মতোই আকাশে চারটা
ইসরায়েলি বিমানের ( যাদের কে
এস্কোর্ট করছিলো দুইটা ইস্রায়েলি
মিরেজ ফাইটার ) উদয় হয় । আকস্মিক
আক্রমণে ইরাকি এয়ারফোর্স বিপর্জস্ত ।
ইসারায়েলি ক্যাপ্টেন ড্রোর একের পর
এক ইরাকি বিমানের ভবলীলা সাংগ
করে চলেছে । তার সাথে সঙ্গী
হিসাবে আছে আরেক ইজ্রায়েলি
ক্যাপ্টেন গোলান । এই অবস্থায়
আকাশে উড়াল দেয় সাইফুল আজম ।উড়াল
দেবার কিছুক্ষণের মাঝেই তার
উইংম্যান কেও ফেলে দেয় ইসরায়েলি
ক্যাপ্টেন ড্রোর । কিন্তু সাইফুল আজম
অন্য ধাতুতে গড়া ।একে একে গোলান ,
ড্রোর সবার প্লেন ফেলে দেন
বাংলার বীর সন্তান সাইফুল আজম ।
মোটামুটি একা লড়াই করে ইসরায়েলি
বিমান গুলোকে ইরাকের আকাশ
ছাড়তে বাধ্য করেন তিনি । ক্যাপ্টেন
ড্রোর এবং গোলান কে পরে যুদ্ধবন্দী
হিসাবে আটক রাখা হয় । এখন পর্যন্ত
আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে ইসরায়েলের
সর্বোচ্চ সংখ্যক বিমান ঘায়েল করার
রেকর্ড ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের ।
এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে
এপর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক শত্রুপক্ষের
বিমান ঘায়েল করার রেকর্ড এর
তালিকায় ও তিনি উপরের দিকে
আছেন।
করাচির মাউরিপুরে টি-৩৩ এর
ইন্সট্রাকটর হিসেবে নিযুক্ত থাকার সময়
১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে যুদ্ধের সময়
এফ-৮৬ নিয়ে ভারতে উড্ডয়নে অংশ
নেন তরুণ এই ফ্লাইয়িং অফিসার যা
বিখ্যাত চাবিন্দা ট্যাংক যুদ্ধ নামে
পরিচিত। এই যুদ্ধে তিনি অংশ নেন
এবং বিমান থেকে রকেট ও গোলা
বর্ষন করে একাধিক ভারতিয় ট্যাংক
কে ধ্বংস ও অকার্যকর করেন। এসময়
চারটি ভারতিয় ”Folland Gnat” জঙ্গি
বিমান তাদের উপর আক্রমন করে। কিন্তু
ফ্লাইট লেফটেনান্ট সাইফুল আজম রুখে
দাড়ান এবং বিমান যুদ্ধ বা ডগ ফাইটে
একটি ভারতিয় ”Folland Gnat” জঙ্গি
বিমান ভুপাতিত করেন। যার স্বীকৃতি
সরূপ তিনি সিতারা-ই-জুরাত
(বাংলাদেশের বীরবিক্রম
এর সমতুল্য, পাকিস্তানের তৃতীয়
সামরিক বীরত্বের খেতাব) খেতাবে
ভূষিত হন।
১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে
তৎকালীন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল
আজম কে রাজকীয় জর্ডান বিমান
বাহিনীতে প্রেষণে প্রেরণ করা হয়।
সেখানে তিনি রাজকীয় জর্ডান
বিমান বাহিনীর Hawker Hunter অপারেট
করতেন এবং সেখানে ১৯৬৭ সালে
সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে ৭
জুন ১৯৬৭ ইরাকী বিমান বাহিনীতে
নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম ইরাকী
এয়ার ফিল্ড H-3 এ তিনি অবস্থান
করাকালে, ইসরাইলি জঙ্গি জেট এয়ার
ফিল্ড H-3 আক্রমণ করে। ঘটনার
পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট
সাইফুল আজম ইরাকী Hawker Hunter বিমান
নিয়ে উড্ডয়ন করে একটি Mirage III এবং
একটি Vautour Bomber ভূপাতিত করেন
(Vautour Bomber টির ছোট্ট কিছু
ভগ্নাবশেষ সাইফুল আজমের Hunter এ
গেঁথে থাকতে দেখা যায়, যা থেকে
তার সহকর্মীরা বুঝতে পারেন তিনি
বিমানটিকে আকাশেই গুড়িয়ে
দিয়েছেন)। উল্লেখ্য Mirage III সাইফুল
আজমের Hawker Hunter এর তুলনায় বহুগুণে
Superior। টা স্বত্বেও Mirage III সাইফুল
আজমের Skill, Tactics ও সাহসের কাছে
পরাস্ত হয়েছে। সাইফুল আজম ও তার
স্কোয়াড্রন সাফল্য লাভ করলেও
অন্যান্য জর্দানি বিমানগুলি ব্যার্থ হয়
এবং ইসরাইলি বোমা বর্ষনে
বেশিরভাগ জর্দানি বিমান ভুমিতেই
ধ্বংস হয়ে যায় ও রানওয়ে গুলি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
✰✰✰ সাইফুল আজম তার সাফল্যের জন্য
জর্দানিদের প্রসংশা ও শ্রদ্ধা পান।
বাদশাহ হুসাইন তার নিজের গাড়িতে
করে সাইফুল আজম কে তার মেস এরৎ
পৌছিয়ে দেন। তার অসাধারণ কৌশল
ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জর্দান সরকার
”Husame Isteqlal ” বা স্বাধিনতা পদক এবং
ইরাক কর্তক ”Noth-es-Shuja” পদকে ভুষিত
করে।
✰✰✰ তিনটি দেশের সম্মান সূচক
সামরিক পদক অর্জনের ঘটনা সামরিক
ইতিহাসে বিরল । একই সাথে তিনটি
দেশের হয়ে যুদ্ধ করা এবং একই
ব্যাক্তির দ্বারা একের অধিক শ্ত্রু
রাষ্ট্রের বিমান ভূপাতিত করার বিরল
রেকর্ডের অধিকারীও এই একই ব্যাক্তি

✰✰✰ ২০০১ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্র
বিমান বাহিনী বিশেষ সম্মাননা
প্রদান করে। তিনি বাইশ জন “Living Eagles”
এর একজন।
স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ
বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন ।
বাংলার এই বীরের প্রতি জানাই
শ্রদ্ধা ।
---------------------------------------
------------------------
✍ ⓣ ⓐ ⓝ ⓩ ⓨ ⓛ ⓔ ⓚ ⓐ ⓡ ⓘ ⓜ ™
☠ চট্রগ্রাম সেনানিবাস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন