বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভারত-পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতা........

১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে
ভারত ও পাকিস্তান একাধিকবার
ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার
পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শন
এবং নিয়মিত মাঝারি ও স্বল্প
পাল্লার ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র
পরীক্ষা গোটা ভারতীয়
উপমহাদেশকে ভয়াবহ রকমের যুদ্ধের
ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। এরই
ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান
সাম্প্রতিক সময়ে মাঝারি পাল্লার
ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপ যোগ্য
শাহিন-৩ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা
সম্পন্ন করেছে। মুলত পাকিস্তানের
তৈরি শাহিন-৩ ক্ষেপনাস্ত্র সর্বোচ্চ
২,৭৫০ কিলোমিটার দূরুত্বের যে কোন
লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত ভাবে পারমাণবিক ও
প্রচলিত ওভারহেড আঘাত হানতে সক্ষম।
যদিও শাহিন-৩ মধ্যম পাল্লার
ক্ষেপনাস্ত্র সর্বোচ্চ ৪৮ কিলোটন
ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন
করতে পারে এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রটি
টার্গেটের ৩৫০ মিটারের মধ্যে
হামলা করতে সক্ষম।
এখানে আন্তর্জাতিক সামরিক
বিশেষজ্ঞদের অভিমত প্রকাশ করেছেন,
শাহিন-৩ মিসাইলের রেঞ্জের মধ্যে
চলে আসছে ভারতের অধিকাংশ শহর
এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা। মুলত
মাঝারি পাল্লার এই শাহিন-৩
ক্ষেপনাস্ত্র ভারতের জন্য নতুন করে
দুশ্চিন্তার কারণ হতে দাঁড়াতে পারে।
কারন পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই
এক রকম হুমকি দিয়ে আসছে ভারত
পাকিস্তানে আক্রমন করলে তারা
পরমানু অস্ত্র ব্যবহারে কোন রকম দ্বিধা
করবে না। যেহেতু শাহিন-৩
ক্ষেপনাস্ত্র এখন ভারতের প্রায় সব
শহরে আঘাত হানতে সক্ষম। তাই
পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমনের
ক্ষেত্রে ভারত অনেকটা অরক্ষিত
থেকে যাচ্ছে।
তবে প্রকাশ থাকে যে, ভারতের
নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিন্তু
বেশ শক্তিশালী এবং ভারত
ইতোমধ্যেই প্রায় ৬.০০ বিলিয়ন ডলার
ব্যয়ে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ সারফেস
টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম
সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। আবার ভারতের
কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড সমৃদ্ধ
৩৫০০ কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি-৪
এবং ৫৫০০-৮০০০ কিলোমিটার পাল্লার
অগ্নি-৫ অত্যাধুনিক ব্যালেস্টিক
ক্ষেপনাস্ত্র মজুত রয়েছে। অগ্নি-৫
ক্ষেপণাস্ত্রে একসাথে তিনটি
ওয়ারহেড বহন করতে পারে ও একবারে
৩৫০ কিলোটনের পারমানবিক অস্ত্র বহন
করতে পারে। ফলে পাকিস্তানের
পক্ষে হয়তো খুব সহজেই নিউক্লিয়ার
এট্যাক করা সম্ভব নাও হতে পারে।
এছাড়া ভারত অত্যন্ত পরিকল্পনা
মাফিক তাদের নিজস্ব নিউক্লিয়ার
সাবমেরিন ভিত্তিক “সেকেন্ড ইন
নিউক্লিয়ার এট্যাক ক্যাপাবিলিটি”
ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিলিয়ন ডলার খরচ
করে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রচলিত যুদ্ধের
সক্ষমতায় ভারত খুব দ্রুত বিশ্বের বৃহৎ
সামরিক পরশক্তির সমপর্যায়ে চলে
যাচ্ছে। এছাড়াও ভারতের নিজস্ব
অ্যান্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল
সিস্টেম হিসেবে এএডি (অ্যাডভান্স
এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ও পিএডি
(পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)
রয়েছে। কিন্তু অপর দিকে
পাকিস্তানের নিকট কোনো এ ধরনের
কোন অ্যান্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল
সিস্টেম এখনও পর্যন্ত নেই।
অবশ্য অনেক সামরিক বিশ্লেষক মনে
করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই
পারমানবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র
প্রতিযোগিতা ভারতীয় এ অঞ্চলে
পরমানু যুদ্ধের সম্ভবনা যেমন বাড়িয়ে
তুলছে তেমনি এক ধরনের কৌশলগত
ভারসাম্যও সৃষ্টি করতে মুখ্য ভূমিকা
পালন করছে। যেহেতু ভারতের কাছে
৯০-১১০ টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে
আবার পাকিস্তানের কাছে ১১০-১৩০
টি পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে।
তাই এক্ষেত্রে ভবিষ্যত যুদ্ধে ভারত ও
পাকিস্তান উভয় দেশই কোন
আবস্থাতেই পারমাণবিক অস্ত্র
ব্যবহারের মতো মারাত্বক ঝুঁকি নিতে
পারবে বলে মনে হয় না।
সিরাজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক, জয়কুড়ি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া,
নাটোর। sherazbd@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন