শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

ইন্ডিয়ান হিন্দু থেকে মসজিদের ইমাম হয়ে উঠার গল্প।

রাভিন্দার কৌশিক থেকে শাকিরঃ ভয়ংকর তথ্য
_________________________________|
আপনাদের কোন এক সময় বলেছিলাম "একটি সংঘটন সঠিক সময়ে সঠিক আঘাত করতে সিদ্ধহস্ত" তাই নিয়েই এবারের আয়োজন।
১৯৬৫ সালে ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট মসজিদের ইমাম কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে দেখা যায় সে ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মী এবং শিখ। ছদ্দবেশে প্রায় ১৭ বছর ধরে ছিল। ঘটনাটা অনেক আগেই শুনেছিলাম কিন্তু অনেক আগের খবর যেহেতু তথ্যসুত্র দিতে পারছি না, তবে সেনাবাহিনীতে যদি অনেক সিনিয়র লেবেলে কেউ থাকে তাহলে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। সেখানে এটা খুব মশহুর একটা ঘটনা।
মুল প্রসংগে ফিরে আসি, আমি এবার আপনাদের আরেকটা ঘটনা শোনাব যার সকল প্রকার তথ্য সুত্র আপনাদের আমি দিতে পারব। কারন ঘটনাটা খুব বেশী দিন আগের না। ঘটনাটা আমি আগেই লিখেছিলাম আমার মুল পেজে। আসুন সিট বেল্ট বেঁধে ্নিন এবং সম্মোহিত হয়ে পরের প্যারাটা বার বার পড়ুন
______________________________________
রাভিন্দার কৌশিকঃ দ্য ব্ল্যাক টাইগার
সে ছিল "RAW" এর ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সিক্রেট এজেন্ট ! যে তার সারাজীবন উৎসর্গ করেছিল ভারতের জন্য !
রাভিন্দর কৌশিক রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে ১১ এপ্রিল ১৯৫২ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি কিশোর জীবনে থিয়েটার কর্মী হিসেবে লখনৌ তে জনপ্রিয় ছিলেন। সেখানে সে একজন "র" কর্মকর্তার নজরে পড়েন। পাকা গোয়েন্দারা জহুরীর চোখ দিয়ে হীরা চিনতে ভুল করে না। রাভিন্দার কেও চিনতে ভুল হয়নি তাঁর। তাকে দেশের সেবা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। সে সানন্দেই রাজী হয়।
তাকে একজন আন্ডারকাভার এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় ট্রেনিং।
তাকে মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স-এর প্রতিটি শাখা সম্পর্কে হাতে কলমে শিখানো হয়। তাকে দিল্লীতে ঝাড়া দুই বছর ব্যাপক ট্রেনিং দেয়া হয়. সেখানে তাকে উর্দু ভাষা, পাকিস্তানের পুরো ভৌগলিক কাঠামো, পাকিস্তান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞান এবং একজন পরিপুর্ন মুসলিম হিসেবে শিক্ষা দেয়া হয়। ভাবতে পারছেন একজন দাদাকে মুসলিম দেশে গোয়েন্দাগিরির জন্য কোরান থেকে শুরু করে ধর্মের প্রতিটি বুৎপত্তিগত জ্ঞান দেয়া হচ্ছে, এখানে মূল বিষয়টি হোলও যারা সেই জ্ঞান দিচ্ছে তারা কারা ? কোন ছদ্দবেশী হুজুর নয়তো ?
[আপনারা কি ব্রিটেনে মাটির নিচের গোপন মাদ্রাসার ঘটনা জানেন?]
রাভিন্দার শুধু আরবী পড়তেই পারত না, সে এর পরিপূর্ণ অর্থ যাকে তাফসীর বলা হয় তাও পারত। যাতে কারো ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ না আসে। যেহেতু সে রাজস্থানের পাঞ্জাবী পরিবার থেকে এসেছিল, তাঁর পাঞ্জাব ভাষা তাকে পাকিস্তানে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছিল, কারণ পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা ছিল পাঞ্জাব।
সকল দরকারী প্রশিক্ষনের পর ২৩ বছর বয়সে তিনি "নবী আহমেদ শাকির" নাম ধারন করে পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে মিশনে যান। রাভিন্দর কৌশিক পাকিস্তানে ১৯৭৪ সালে প্রবেশে করেন।
বরাবরের মত এসপিওনাজ জগতের নিয়ম অনুযায়ী সে পাকিস্তান প্রবেশের পর তাঁর সকল পরিচয় "র" নস্ট করে ফেলে।
________________________________
শুরু হয় "নবী আহমেদ শাকির" এর নতুন জীবন। সেখানে সে করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। উল্লেখ্য পাকিস্তানের বেশিরভাগ কমিশন্ড অফিসার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেই তখন পাওয়া যেত।
এলএলবি পাশের পর রাভিন্দর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অর্থ বিভাগের একজন ক্লার্ক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর এক সেনা ইউনিটের দর্জির কন্যা "আমানত" কে বিয়ে করেন এবং তাদের এক পুত্রসন্তান হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি পেয়ে এবং পরীক্ষা দিয়ে সে কমিশন্ড র‌্যাংকে চলে যায়, সেখানে মেজর হিসেবে পদ পায়।
১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সক্রিয় থাকে।
সে নিয়মিত ভারতীয় ডিফেন্স কে পাকিস্তানের বিভিন্ন গোপন কার্যক্রম এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তথ্য পাচার করত। ১৯৮০ সালে যখন পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে একটি শক্ত যুদ্ধ শুরু করার প্রকল্প হাতে নেয়, তখন তাঁর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী চমৎকার এক সমর কৌশল তৈরী করে। রাভিন্দার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এমন একটা পজিশনে ছিল যাকে বলা হয়ে থাকে "সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায়", তাঁর কারণে সেবার কমপক্ষে তাঁর দেশের ২০০০০ হাজার সেনা সদস্য প্রানে বেঁচে যায়। চিন্তা করতে পারেন সংখ্যাটা ! এভাবেই চলছিল তার আন্ডার কাভার তৎপরতা।
পাঠকবৃন্দ, কি মনে হচ্ছে আপনাদের ? কোন কল্প কাহিনী ? না এটাই সত্যি, এই পৃথিবীকে আপনি যেভাবে দেখছেন হয়ত পৃথিবী তেমন না! আপনি হয়ত খেলা নিয়ে বুঁদ, অন্য কেউ হয়ত আপনার জাতি/দেশকে ধ্বংশের নেশায় বুঁদ !
________________________________
সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা একজন নিম্ন স্তরের অপারেটিভ, ইনিয়াত মাসিহ নামে একজনকে কৌশিকের সাথে যোগাযোগের জন্য "সিস্টেমে" পাঠায়। কিন্তু তার ভুলের কারণে সেই এজেন্ট পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা ধৃত হয় এবং তাকে টর্চারের সময় সে রাভিন্দরের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করে দেয়।
এখানে লক্ষনীয় দুটি বিষয়, তার কাভার তার নিজের কোন কারণে প্রস্ফুটিত হয়নি, বরঞ্চ ইন্ডিয়ান সিক্রেট সার্ভিসের ভুলের কারণে প্রকাশিত হয়েছিল। আর কোন সিক্রেট এজেন্ট কে আগে টর্চার কিভাবে সহ্য করতে হয় তা শিখানো হয়।
আরেকটা বিষয় হোলও, এই ধরনের হাইলি সিক্রেট মিশনের যারা যায় তাদের বা সেই সব সিক্রেট এজেন্টের একটি দাঁত থাকে না, দাতের ফাকে সায়ানাইড ক্যাপসুল সমৃদ্ধ একটি নকল দাঁত লাগানো থাকে, যাতে টর্চার সহ্য করতে না পারলে তা দাঁত দিয়ে চেপে ভেঙ্গে মৃত্যুবরণ করা যায়। এটাই রিয়েল এসপিওনাজ, রিয়েল দেশপ্রেম।
তবে রাভিন্দারের এই রকমের কোন দাত দেয়া হয় নি! এই ধরনের হাস্যকর ভুল এই ধরনের "হাইলি ক্ল্যাসিফায়েড" মিশনে কেউ করবে না, যা "র" করেছিল।
এরপর শুরু হয় রাভিন্দারের উপর মারাত্মক নির্যাতন। তাকে শিয়ালকোটে জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্রে দুই বছর ধরে নির্যাতন করা হয়। তাকে কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। কিন্তু পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্ট তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে।
কৌশিক শিয়ালকোট, কোট লাখপাত এবং মিয়ানওয়ালি জেলে ১৬ বছর ধরে ছিল, যেখানে সে হাঁপানি এবং টিবি সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, এছাড়া সে ট্রমায় আক্রান্ত হয়। এরপর ২৬ জুলাই ১৯৯৯, মুলতানের কেন্দ্রীয় কারাগারের হৃদরোগ মারা যায়., সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
________________________________
তার পরিবার এই খবর শোনার সাথে সাথে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে কিন্তু বরাবরের মত রাভিন্দারকে চিনতে কেউ অস্বীকার করে, কারণ পুর্বেই আপনাদের বলেছি তার সকল ডকুমেন্ট পুড়িয়ে নস্ট করা হয়।
ইন্ডিয়ান সরকারের "ভ্রান্ত" নীতি অনুযায়ী কোন আন্ডার কাভার এজেন্ট কোথাও ধরা পড়লে তাকে স্বীকৃতি না দেয়ার নিয়ম আছে।
মৃত্যুর পুর্বে সে গোপনে ভারতে তাঁর পরিবারকে চিঠি দেয়, এবং তার প্রকৃত অবস্থা জানায়। সেখানে তার সাথে যে নির্দয় আচরণ করা হয়েছে তার বিবরণ থাকে। সেই চিঠিতে সে লিখে "ক্যায়া ভারত য্যায়ছে বাড়ে দেশকে লিয়ে কোরবানী দেনে ওয়ালো কা এহি মিলতা হ্যায়" অর্থাৎ ভারতের মত বড় দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গকারীর কি এই পুরস্কার ?
এভাবেই সমাপ্ত হয় শতাব্দীর অন্যতম সেরা একজন এসপিওনাজ এজেন্টের জীবন। তার মৃত্যুর পর ভারতীয় মিডিয়া সরকারকে তুলোধুনো করে ছাড়ে।
কি কেমন লাগল আপনাদের ?
এখন কে নিশ্চিত করবে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগে রাভিন্দার কৌশিক নেই ?? পাকিস্তানের মত দেশের জন্য রাভিন্দারকে আরবী সহ কোরানে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছিল, সেই তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা তো পান্তাভাত। বাংলাদেশের যে কোন প্রশাসনের কয়জন মুসলিম আরবী সম্পর্কে, কোরানের তাফসীর সম্পর্কে অবগত ?? এখানে সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে "ধর্ম নিরপেক্ষ" সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেই হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর বিষয় পরিস্কার হয়েছে , রাকেশ আস্থানা জড়িত, কিন্তু তার দেশীয় সহযোগী কে তা কিন্তু প্রকাশিত হয়নি।
সুতরাং সাম্প্রতিক সকল বিষয় - বাংলাদেশ ব্যাংক, সেনাসদরে ধর্ষন, শিক্ষানীতি, রামপাল, বিদ্যুত, গ্যাস, জঙ্গীর ফলন বেড়ে যাওয়া[যারা ব্রেইন ওয়াশ করছে সেই সব হুজুর গুলো কারা?], মেন্দি এন সাফাদীর বাংলাদেশ মাথা ব্যাথা সব নিয়ে চিন্তার ভার আপনার উপর ছেড়ে দিলাম !
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবাইকে ।

সকল সুত্রঃ
http://defenceforumindia.com/forum/threads/ravindra-kaushik-former-raw-agent-real-black-tiger.40490/
https://en.wikipedia.org/wiki/Ravindra_Kaushik
https://www.youtube.com/watch?v=QIra9vjkPOM
https://www.youtube.com/watch?v=Kqa0tODtMQM
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবাইকে ।
___________________________________

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন