বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬

ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে প্রাণীর ছবি তোলা, তোলানো, আকাঁ-আঁকানো, রাখা, রাখানো, দেখা-দেখানো ইত্যাদি সবই হারাম।


ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে প্রাণীর ছবি তোলা, তোলানো, আকাঁ-আঁকানো, রাখা, রাখানো, দেখা-দেখানো ইত্যাদি সবই হারাম| মহান আল্লাহ্ পাক তিনি প্রাণীর ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, দেখা-দেখানো ও রাখা-রাখানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন| এরপরও যারা মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ-নিষেধ অমান্য করে ছবি তুলবে তারা চরম গোমরাহ হবে ও চির জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!!! যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
(১)
ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﻻﻋﻤﺶ ﻋﻦ ﻣﺴﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺎ ﻣﻊ ﻣﺴﺮﻭﻕ ﻓﻰ ﺩﺍﺭ ﻳﺴﺎﺭ ﺑﻦ ﻧﻤﻴﺮ ﻓﺮﺍﻯ ﻓﻰ ﺻﻔﺘﻪ ﺗﻤﺎﺛﻴﻞ ﻓﻘﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ .ﺳﻤﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻥ ﺍﺷﺪ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﺼﻮﺭﻭﻥ
অর্থঃ- “হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহর নিকট শুনেছি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে|”
দলীল-
✔ পবিত্র বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃষ্ঠাঃ৮৮০|
(২)
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে| এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর|”
দলীল সমূহঃ-
✔ পবিত্র বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০,
✔ মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ২০১|
(৩)
عن عائشة عليها السلام حدثته ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.
অর্থঃ- উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন|
দলীল সমূহঃ-
✔ বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০,
✔ মিশকাত পৃঃ ৩৮৫|
------------
(৪)
عن ابى زرعة قال مع ابى هريرة دار مروان بن الحكم فراى فيها تصاوير وهى تبنى فقال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يقول الله عز وجل ومن اظلم ممن ذهب يخلق خلقا كخلقى فليخلقوا ذرة او ليخلقوا حبة او ليخلقوا شعيرة.
অর্থঃ- হযরত আবু যুরয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে মদীনা শরীফের এক ঘরে প্রবেশ করলাম, অতঃপর তিনি ঘরের উপরে এক ছবি অংকনকারীকে ছবি অঙ্কন করতে দেখতে পেলেন, এবং বললেন আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে| তাকে বলা হবে একটি শস্যদানা সৃষ্টি কর অথবা একটি পিপিলিকা সৃষ্টি কর|
দলীল-
✔ বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০|
(৫)
عن ابى حجيفة رضى الله تعالى عنه عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثمن الكلب وكسب البغى ولعن اكل الربى وموكله والواشمة والمستوشمة والمصور.
অর্থঃ- হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, “খতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্তের দাম, ও কুকুরের দাম নিতে এবং যেনাকারীনীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অঙ্গে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ছবি অংকন করে, এদের সবার ওপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লা’নত দিয়েছেন|”
দলীল-
✔ বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১|
(৬)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا مسترة بقرام فيه صورة فتلون وجهه ثم تناول الستر فهتكه ثم قال ان من اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله.
অর্থঃ- উম্মুর মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট আসলেন| প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা চাদর গায়ে দেয়া ছিলাম| এটা দেখে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক রঙ্গিন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি চাদর খানা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন “ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য (কোন প্রাণীর ছুরত) সৃষ্টি করে|”
দলীল-
✔ মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০০|
(৭)
عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থঃ- হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আজাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে|”
দলীল-
✔ মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০১|
(৮)
عن سعيد قال جاء رجل الى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فا علا فاصنع الشجر وما لا نفس له.
অর্থঃ- হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন| হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও| সে ব্যক্তি উনার নিকটবর্তী হল| পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও| সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব| হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে| এবং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবি গুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে|” এবং ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক|
দলীল-
✔ মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২|
(৯)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول قال الله تعالى ومن اظلم ممن ذهب يخلق كخلقى فليخلقوا ذرة اوليخلقوا حبة او شعيرة
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত তৈরী করে| তাদেরকে বলা হবে- তাহলে তোমরা একটি পিপিলিকা অথবা একটি শস্য অথবা একটি গম তৈরী করে দাও|”
দলীল-
✔ মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৫|
(১০)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يضاهون بخلق الله.
অর্থঃ- উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত| হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত তৈরী করবে|”
দলীল-
✔ মিশকাত পৃঃ ৩৮৫|
(১১)
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে|
দলীল-
✔ মিশকাত শরীফ- ৩৮৫|
(১২)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يخرج عنق من النار يوم القيمة لها عينان تبصران اذنان تسمعان ولسان ينطق يقول انى وكلت بثلثة بكل جبار عنيد وكل من دعا مع الله الها اخر وبالمصورين.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন এমন একখানা আগুনের গর্দান বের হবে, যার দুটো চক্ষু থাকবে| যদ্বারা সে দেখতে পাবে| দুটো কান থাকবে, যদ্বারা সে শুনতে পাবে| একটি মূখ থাকবে, যদ্বারা সে কথা বলবে। গর্দানটি বলবে- নিশ্চয় আমাকে তিন ব্যক্তির অভিভাবক বানান হয়েছে- (১) প্রত্যেক অহংকারী অত্যাচার লোকের (২) যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অন্যকেও প্রভু ডাকে (৩) যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করে|”
দলীল-
✔ মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৬|
(১৩)
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الصورة فى البيت ونهى ان يصنع ذلك.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন এবং ওটা তৈরী করতেও নিষেধ করেছেন|
দলীল-
✔ তিরমিযি ১ম জিঃ পৃঃ ২০৭|
(১৪)
عن جابر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم امر عمر بن الخطاب زمن الفتح وهو بالبطحاء ان ياتى الكعبة فيمحو كل صورة فيها فلم يدخلها النبى صلى الله عليه وسلم حتى محيت كل صورة فيها.
অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মক্কা বিজয়ের সময় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হুকুম করলেন- তিনি যেন পাথর দিয়ে ক্বাবা ঘরের সমস্ত মূর্তি বা চিত্রগুলি ধ্বংস করে দেন|
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাবা ঘরের মুর্তি বা চিত্রগুলো ধ্বংস না করা পর্যন্ত ক্বাবা ঘরে প্রবেশ করলেন না|
দলীল-
✔ আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২১৯|
(১৫)
عن عيسى بن حميد قال سال عقبة الحسن قال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.
অর্থঃ- হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হযরত ওকবাতুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে| তখন হযরত ঈসা বিন হুমাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল|
দলীল-
✔ মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬|
(১৫)
عن ابى عثمان قال حدثنى لبابة عن امها وكانت تخدم عثمان بن عفان ان عثمان ابن عفان كان يصلى الى تابوت فيه تماثيل فامر به فحك.
অর্থঃ- হযরত আবু উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, লোবাবাহ উনার মাতা হতে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, উনার মাতা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খেদমতে ছিলেন, আর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সিন্দুকের দিকে নামায পড়ছিলেন| অতঃপর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদেশে ওটা নিঃচিহ্ন করে ফেলা হলো|
দলীল-
✔ মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬|
(১৬)
عن اسامة رضى الله تعالى عنه قال دخلت مع النبى صلى الله عليه وسلم الكعبة فرايت فى البيت صورة فامرنى فاتيته بدلو من الماء فجعل يضرب تلك الصورة ويقول قاتل الله قوما يصورون ما لا يخلقون.
অর্থঃ- হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র ক্বাবা ঘরে প্রবেশ করলাম| আমি ক্বাবা ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলাম| অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমে আমি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলাম|
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ছবিগুলিতে পানি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ঐ গোত্রের সাথে জ্বিহাদ ঘোষণা করেছেন, যে গোত্র এরূপ প্রাণীর ছুরত তৈরী করে| যা সে তৈরী করতে অক্ষম অর্থাৎ জীবন দিতে পারেনা|”
দলীল সমূহঃ-
✔ মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম জিঃ পৃঃ২৯৬,
✔ তাহাবী ২য় জিঃ পৃঃ৩৬৩|
(১৭)
عن ابن مسعود قال اشد الناس عذابا يوم القيامة رجل قتل نبيا او قتله نبى او رجل يضل الناس بغير العلم او مصور يصور التماثيل.
অর্থঃ- হযরত ইবনে মাস্উদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিদের ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হবে, যারা কোন নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করেছে অথবা কোন নবী আলাইহিমুস সালাম যাদেরকে হত্যা করেছেন এবং ঐ সমস্ত লোক যারা বিনা ইলমে মানুষদেরকে গোমরাহ করে এবং যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করে|
দলীল-
✔ মুসনদে আহমদ ২য় জিঃ পৃঃ২১৭|
অনুরূপ অসংখ্য অগণিত হাদীছ শরীফ রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা রাখা ইত্যাদিকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে| আর মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ তাই শরীয়তে হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে|
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনারা বলেন, “আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব প্রাণীর ছবি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন “অথচ দলীল হিসেবে পেশ করা হলো শুধু হাদীছ শরীফ! তাহলে কি এই প্রমাণিত হয় না যে, আল্লাহ্ পাক প্রাণীর ছবি নিষিদ্ধ করেননি, করেছেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম|
এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, তাহলে আমাদের প্রশ্ন হলো- মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি কখানো ওহী ব্যতীত কোন কথা বলেছেন? কস্মিনকালেও নয়| কারণ মহান আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে সুস্পষ্টভাবেই ইরশাদ করেছেন যে,
وما ىنطق عن الهوى ان هو الا وحى ىوحى.
অর্থঃ- “আমার হাবীব যতক্ষণ পর্যন্ত ওহী নাযিল না হয় ততক্ষন পর্যন্ত কোন কথাই বলেন না|”
অর্থাৎ আমার নির্দেশেই আমার হাবীব সব বলেন ও করেন|
যদি তাই হয়ে থাকে তবে তো এটাই সাব্যস্ত হয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব উনার কথাগুলো মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক উনারই কথা|
অতএব প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নির্দেশগুলো মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক উনারই আদেশ-নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত| কাজেই শরীয়তের কোন বিষয় কুরআন শরীফ-এর দ্বারা নিষিদ্ধ বা হারাম সাব্যস্ত হওয়ার যেরূপ গুরুত্ব রয়েছে, তদ্রুপ হাদীছ শরীফের দ্বারা নিষিদ্ধ বা হারাম সাব্যস্ত বিষয়েরও তদ্রুপ বরং তার চেয়েও বেশী গুরুত্ব রয়েছে|
অতএব, প্রাণীর ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো, দেখা-দেখানো হারাম এটা শুধু আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব উনার ফায়ছালাই নয় বরং মহান আল্লাহ্ পাক উনার ফায়ছালাও| আর মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন তাই ইসলামে বা শরীয়তে তা হারাম|
স্মর্তব্য, ইসলামে বা শরীয়তে প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে-
مضا هاة لخلق الله.
অর্থাৎ- “স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা|”
কারণ ছবি ও মূর্তি তৈরী করার অর্থই হলো নিজেকে স্রষ্টা হিসেবে প্রকাশ করা| (নাউযুবিল্লাহ্) নির্ভরযোগ্য সকল কিতাবেই এটা উল্লেখ আছে|
নিম্নে এ সম্পর্কিত কতিপয় দলীল প্রমাণ পেশ করা হলো-
✔ ফখরুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ বুখারী শরীফের শরাহ্ “উমদাতুল ক্বারী”-এর ২২ খণ্ড ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
صورة الحيو ان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر وسواء صنعه لما يمتهن او بغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهة لخلق الله.
“প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ| সম্মানের জন্য তৈরী করুক অথবা অন্য কারণে, সবটার একই হুকুম| অর্থাৎ প্রত্যেক অবস্থাতেই তা হারাম| কেননা, ছবি ও মূর্তি তৈরীর মধ্যে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে|”
✔ রঈসুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “শরহে নববী” ৭ম জিঃ ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث وسواء صنعه بما يمتهن او بغيره فصنعته حرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله تعالى.
“প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত| কেননা হাদীছ শরীফ সমূহে এ ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে| প্রাণীর ছবি সম্মানের জন্য তৈরী করুক অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে তার একই হুকুম| অর্থাৎ সর্বাবস্তায়ই প্রাণীর ছবি উঠানো হারাম| কেননা এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা প্রকাশ পায়|”
✔ উক্ত কিতাবের উক্ত খন্ডের ৮৪ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে যে,
قال العلماء سبب امتناعهم من بيت فيه صورة كونها معصية فاحشة وفيها مضاهاة لخلق الله تعالى ......
“উলামা-ই-কিরামগণ বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি রয়েছে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ না করার কারণ হলো ছবি তৈরী করা গুনাহ ও ফাহেশা কাজ এবং এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে……….|”
✔ “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ খন্ডে উল্লেখ আছে, (মূল ইবারত কমেন্ট বক্সে স্ক্রীন শর্ট দ্রষ্টব্য)
“……………. আল্লামা শামী “রদ্দুল মুহতারে” উল্লেখ করেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয| কেননা এটা স্রষ্টার সাদৃশ্যতা দাবী করার নামান্তর| অনুরূপ “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা প্রত্যেক অবস্থাতেই হারাম| কেননা এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে| ………….. যেহেতু ছবি হারাম হওয়ার কারণ হলো স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা| তাই পার্থক্য করা যাবেনা (বরং সব ধরণের ছবিই হারাম)………… |”
অতএব, উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ছবি হারাম হওয়ার আরেকটি কারণ হলো-
مضا هاة لخلق الله.
অর্থাৎ- “স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা|” অর্থাৎ ছবি তৈরীকারী প্রকারান্তরে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা দাবী করলো, যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত|
মূলকথা হলো প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে যত কারণই বর্ণনা করা হোক না কেন সব কারণের মূল ও প্রধান কারণ হচ্ছে মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণীর ছবি তুলতে, আঁকতে, ও রাখতে নিষেধ করেছেন| তাই প্রাণীর ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, দেখা-দেখানো ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয|
--------------------------------------- চলবে ইনশাআল্লাহ্ -----------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন