মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

দেশী গরুতেই জমছে কুরবানীর হাট

দেশের খবর - ৩১ আগস্ট, ২০১৬
 
দেশী গরুতেই জমছে কুরবানীর হাট
রাজশাহী সংবাদদাতা

: কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে পশুর হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। হাটে আসতে শুরু করেছে গরু-ছাগল। এবারের হাটে দেশী গরুর চাহিদা ও আমদানি দুটোই বেশি। হাটগুলোতে দেশী গরুতে পরিপূর্ণ থাকায় ক্রেতারাও বেশ হাসি খুশি বা সন্তুষ্টি চিত্তে গরু দেখতে আসছেন।
প্রতি বছর রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি, মহানগরীর সিটি হাট, বানেশ্বর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনাইচন্ডী, নওগাঁর চৌবাড়িয়া হাট ঈদের অন্তত একমাস আগে থেকে ভারতীয় গরুতে ভরপুর থাকে। তবে এবারই এর ব্যাতিক্রম ঘটছে।
গত এক মাস থেকে ভারত থেকে বিষাক্ত গরু আসার হার একেবারেই কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে যে হারে গরু আসে এখন তার চেয়েও কম গরু আসছে। ফলে ভারতীয় গরুর আমদানি কমে যাওয়ার সুযোগে দেশী খামারীরা বছরজুড়ে পালিত স্বাস্থ্যবান গরু নিয়ে হাটগুলোয় হাজির হচ্ছেন ভালো লাভের আশায়।
তবে দেশী গবাদি পশু কেনা-বেচায় করিডোর শুল্ক আরোপ করায় শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন পশু পালনকারি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। গবাদি পশু আমদানি স্থল শুল্ক সেন্টারের (করিডোর) ছাড়পত্র ছাড়া দেশী গরু-মহিষ কেনা-বেচা করাও যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।
তাদের অভিযোগ, করিডোরের ছাড়পত্র ছাড়া গবাদি পশু বহন করতে গেলে বিজিবি ও কাস্টমসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে ভারত থেকে গবাদি পশু আমদানির নয়টি করিডোরের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ করিডোর।
এখান দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গবাদি পশু আমদানি হয় না। তবে প্রতিদিন সেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০টি দেশি গবাদি পশু করিডোর করা হচ্ছে এখন। এজন্য পশু প্রতি ৫শ’ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিষালবাড়ি গ্রামের গরু ব্যবসায়ী জিয়াউল হক বলেন, কুরবানীর হাটে দেশী গরু বিক্রির জন্য ৫শ’ টাকা হারে করিডোরে শুল্ক দিয়ে ছাড়পত্র নিতে হচ্ছে। করিডোরের ছাড়পত্র না থাকলে রাজাবাড়ি চেক পোস্টে বিজিবি গরুগুলো আটকে দিচ্ছে।
তবে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ করিডোরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দিদারুন নবী বলেন, দেশী ও ভারতীয় গবাদি পশু আলাদাভাবে চেনার উপায় না থাকায় সীমান্ত এলাকার সকল গরু-মহিষ করিডোর করতে হয়। এতে তাদের করার কিছু নেই।
এমন নানা কারণে স্থানীয় খামারিরা হাটে যে দেশী গরু তুলছেন তার চড়া দাম হাঁকছেন। ফলে ক্রেতারা গরু কিনতে হাটে গেলেও বর্তমানে দাম-দর করেই ফিরে আসছেন। ঈদের সময় এগিয়ে এলে দাম কিছুটা কম হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
তাই দেশী গরুর আমাদানি বৃদ্ধি এবং লোকজনের সমাগমে রাজশাহীর পশু হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করলেও সেভাবে এখনও কেনা-বেচা শুরু হয়নি। সাধারণ ক্রেতারা সময় নিয়ে একটু দর দাম কষেই পছন্দের গরুটি কিনতে চাইছেন।
রাজশাহী মহানগরীর সিটি হাটে কুরবানীর গরু কিনতে গিয়ে শালবাগান এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল হক বলেন, ভারতীয় গরুর মজুদ কম। আর দেশী গরু উঠলেও বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম হাঁকছেন।
যে গরু গত বছর ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে, সেই সাইজের গরু এবছর ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার উপরে। ফলে অনেকে হাটে গেলেও দাম শুনে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এতে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারই কুরবানী দিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কেবল সাধারণ ক্রেতারাই নন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসেও চড়া দামের কারণে গত কয়েক দিন থেকে গরু দেখেই ফিরে যাচ্ছেন উত্তারাঞ্চলের বৃহত্তম এই হাট থেকে।
গরুর হাটের ইজারাদাররা জানান, কুরবানীর হাটে এখনো তেমন কেনাবেচা শুরু হয়নি। তবে দেশী গরুতে হাট জমতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে পশুর আমদানিও যেমন বাড়বে তেমনি কেনাবেচা চলবে পুরোদমে।
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ভারতীয় গরুর আমদানি কম হলেও গতবারের চেয়ে এবার দেশী গরুরই চাহিদা বেশি। খামারিরা প্রতিহাটে গরু নিয়ে হাজির হচ্ছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালি, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সিটি হাট থেকে গরু নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
তবে এবার বিক্রেতারা চড়া দাম হাঁকছেন। ফলে তারা ফিরে যাচ্ছেন। এরপরেও আগামী জুমুয়াবারের মধ্যেই পুরোদমে পশু হাট জমে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন