মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

বাংলাদেশের এই ফোর্সগুলি যে কোন দেশের কাছে ঈর্ষার কারণ

যেভাবে ২০ মিনিটে জঙ্গিদের খেলখতম করে দিয়েছে তা প্রশংসনীয়

Jul 3, 2016Staff Reporter

রক্তে রাঙা গুলশান। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। কিন্তু যেভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্পেশাল ফোর্স পুরো ঘটনাকে কার্যত ট্যাকল করেছে, তা সবার কাছে এখন প্রশংসনীয়। যারা কিনা বিশ্বের তাবড় তাবড় স্পেশাল ফোর্সের থেকে যে কম যায় না তা শনিবারের মাত্র ২০ মিনিটের অভিযানেই বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এদের ট্রেনিং, কাজের ধরণ, গোপনীয়তা- সবকিছু যেন লাইভ থ্রিলার মুভি! এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশের এমন কতগুলি স্পেশাল ফোর্স রয়েছে।

এনএসআই(  ন্যাশনাল সিকউরিটি ইন্টেলিজেন্স)

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা। ন্যাশনাল সিকউরিটি ইন্টেলিজেন্স। যুগযুগ ধরে এই বেসামরিক সংস্থাটি বাংলাদেশের প্রাইম গোয়েন্দা সংস্থা ছিল। দেশের প্রতিটা জেলায়, প্রতিটা থানায় রয়েছে অফিস। সমস্ত কিছু হয় গোপনে। এমনকি তাদের হেডকোয়ার্টারও পুরোপুরি আন্ডারকাভার।

ধরণ:  রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অখন্ডতা, বাইরের দেশের হুমকির বিষয়গুলি দেশের ভিতরে ট্যাকল করা, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স। গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করে তা বিশ্লেষণ করা ও প্রয়োজন অনুসারে সরকারকে জানানো।

ট্রেনিং:  পুরোপুরি গোপনীয়। দেশে ও দেশের বাইরে। তবে, আর্মি, নেভি, এয়ার, ডিজিএফআই’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ট্রেনিং হয়, তাদের ফ্যাসিলিটিতে।


গোপনীয়তা: সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পরিচালিত।

সোয়াট (স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স)

আমেরিকার সোয়াট টিমের আদলে, তাদেরই অর্থায়নে, তাদেরই ট্রেনিংয়ে এবং তাদেরই সব ইক্যুইপমেন্টে সজ্জিত হয়ে বাংলাদেশেও যাত্রা শুরু করে তাদেরই সমান আকৃতির একটা সোয়াট টিম। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স টিম- সোয়াট।

ধরণ: ছোট্ট টিম, পুরোপুরি উদ্ধার অভিযান কেন্দ্রীক। সোয়াটের ধারণাটা সুন্দর। শুরু আমেরিকায়। যেসব সংস্থায় সশস্ত্র উদ্ধারকাজ দরকার হতে পারে, তেমন সব সংস্থার জন্য একই ধরনের একটা করে টিম গঠন করে দেওয়া হয়। এই টিমগুলির ট্রেনিং একই রকম, সামান্য এদিক সেদিক। কিন্তু তারা থাকবে লোকালাইজড সংস্থার সঙ্গে । যেমন, এফবআই’র নগরভিত্তিক প্রতিটা অফিসে, পুলিশের প্রতিটা বড় ইউনিটে ছোট একটা করে সোয়াট টিম, কোস্টগার্ড, বর্ডারগার্ড, কাস্টমস, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন- সর্বত্র।

নিয়োগ:  খুবই শক্তপোক্ত নিয়োগ হয় এই ফোর্সটায়। শারীরিক হার্ডওয়ার্কের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়।

আকৃতি:  সব সোয়াট টিমই পঁচিশ-পঁয়তাল্লিশজনে সীমাবদ্ধ।

ট্রেনিং:  লোকে বলে, ফুড সাপ্লিমেন্ট দিয়ে তাদের ব্যায়ামের পরিমাণ ও সহ্যক্ষমতা বাড়ানো হয়, তারপর এক্সটেন্সিভ এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে তৈরি করা হয় মাসলম্যান।


গোপনীয়তা:   মনে তো হয় খুব। কারণ, কোন অপারেশনের কথা জানা যায় না, স্ট্রিট ডিউটি (যা মূলত শো অফ) এই দেখা গেছে বাংলাদেশের সোয়াটদের।

কাজের ক্ষেত্র: ডিএমপি কমিশনারের সরাসরি নির্দেশে পরিচালিত।

বিশেষায়িত অস্ত্র:  মার্কিন সোয়াট ও মেরিন স্ট্যান্ডার্ডের সব অস্ত্র। সামনে নাকি হামভি জিপও আনা হবে কাজে গতি সঞ্চারের জন্য।

ফরমেশন কম্যান্ডো কোম্প্যানি

ধরন: দুই থেকে তিনটা প্ল্যাটুন নিয়ে এক কোম্পানি। একজন ক্যাপ্টেন বা মেজরের অধীনে আর্মি ফরমেশনগুলিতে একটা করে কম্যান্ডো কোম্প্যানি থাকার কথা। প্রতি ডিভিশনেই (বা ক্যান্টনমেন্টে) আছে এমন কোম্পানি।

ট্রেনিং: চার থেকে ছয় মাসের অকল্পনীয় ট্রেনিং।

গোপনীয়তা: তেমন কিছু নেই। নামেই যার পরিচয়।

বিশেষায়িত অস্ত্র:  টাইপ ফিফটি সিক্সের লাইট ফুলমেটাল ভার্শন (এখানে সবচেয়ে সাধারণ), বিশ্ব কাঁপানো উজি মেশিন পিস্তল ও সাবমেশিনগান, মার্কিন এম ফোর কারবাইন, স্পেশাল ফোর্সেস শর্ট ব্যারেল স্পেশাল এডিশন কারবাইন, কমান্ডো গ্রেনেড-নাইফ-ভেস্ট-এস্কেপ টুলস।

কাজের ক্ষেত্র:  সামরিক। শত্রুব্যুহভেদ। শত্রুরেখার পিছনে কাজ। গোপন তথ্য উদ্ধার/ গোপন স্যাবোট্যাজ। স্পেশাল অ্যাসাইন্ড কিলিং। স্পর্শকাতর উদ্ধারকাজ বা শত্রুবাহিনীর মূল কোন একটা পয়েন্ট গুঁড়িয়ে দেওয়া।

সিটিআইবি (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো)

ধরন: সন্ত্রাস দমন


নিয়োগ: ডিজিএফআই থেকে। ডিজিএফআই’র একটা পরিদপ্তর এই উপ-সংস্থা। কিন্তু এর সক্ষমতা ব্যাপক, তাই কোথাও কোথাও একে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়।

ট্রেনিং: পৃথিবীর বড় বড় অ্যান্টি টেররিজম অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আদান-প্রদান হয় ট্রেনিংয়ে।

কাজের ক্ষেত্র: শুধু বড় আয়তনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নিয়ে ডিপকাভার তদন্ত, প্রয়োজনে আরো ডিপ আক্রমণ।

এসএসএফ (স্পেশাল সিকউরিটি ফোর্স)

ধরন:  সরকারপ্রধানের নিরাপত্তার বিশেষায়িত বাহিনী। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের অধীনে গঠিত ছিল, বর্তমানে মেজর জেনারেলের অধীনেও কাজ করে।

নিয়োগ: তিন বাহিনী থেকে। অপারেটিভরা সাধারণত ক্যাপ্টেন বা সমমানের পদবী থেকে আসা।

আকৃতি:  বলা হয় হাজার আড়াই।

গোপনীয়তা: পুরোপুরি। ফিল্ডের অনেক কাজ বাস্তবায়নে পুলিশ-র‍্যাব এমনকি সেনাবাহিনীও কাজে লাগানো হয়।

কাজের ক্ষেত্র: প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা, গোয়েন্দা নজরদারি, সফর সঙ্গী হওয়া।

বিশেষায়িত অস্ত্র:   ইলেক্ট্রনিক জ্যামার ফিফটিন রাউন্ড পিস্তল, স্পেশাল স্নাইপার রাইফেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন