বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬

ইতিহাস: ১৯৯২ সালে ভারতের হিন্দু সন্ত্রাসিদের কর্তৃক বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার দৃশ্যের ভিডিওটি সবাই সংগ্রহে রাখুন নয়ত ইতিহাস হারিয়ে যাবে



ভারতের মোঘল স্থাপনার অন্যতম পবিত্র বাবরি মসজিদ এর সংঘাতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ বাবরি মসজিদ হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে আলোচিত মসজিদের নাম। বাবরি মসজিদ’র অর্থ হলো বাবরের মসজিদ। ১৫২৭ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে নির্মিত হয় বলে এর এইরকম নামকরণ হয়। মসজিদটি ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের উপর অবস্থিত।

১৯৯২ সালে ভারতের হিন্দু সন্ত্রাসিদের কর্তৃক বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার দৃশ্যের ভিডিওটি সবাই সংগ্রহে রাখুন নয়ত ইতিহাস হারিয়ে যাবে।




১৯৯২ সালে ভারতের উগ্র হিন্দু রাজনৈতিক সমাবেশের উদ্যোক্তারা ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী মসজিদ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসজিদ সংলগ্ল এলাকায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশ শুরু করে। যা দেড় লক্ষ লোকের সম্মিলিত একটি দাঙ্গার রুপ নেয়। এই দাঙ্গার ফলে মসজিদটি সম্পূর্ণরুপে ভূমিসাৎ করে দেয় হিন্দুরা। ফলস্বরুপ ওই একই সালে ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হতে থাকে। ছড়িয়ে পড়া এসব দাঙ্গার মধ্যে কেবলমাত্র মুম্বাই ও দিল্লীতেই হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যায়।

১৮৫৩ সালে প্রথম রেকর্ডকৃত সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আওয়াধের নওয়াব ওয়াজিদ আলী শাহের সময়ে নির্মোহিস নামে একটি হিন্দু গ্রুপ দাবি করে, বাবরী মসজিদটি সম্রাট বাবরের আমলে একটি মন্দির ভেঙ্গে তৈরি করা হয়েছে। এরপর দুবছর ধরে বারবার এ নিয়ে সংঘর্ষ হয় এবং প্রশাসন সেখানে মন্দির নির্মাণ অথবা ধর্মস্থান হিসাবে একে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন।

১৯০৫ সালের ফয়জাবাদ জেলার গেজেটিয়ারের মতে, ১৮৫৫ সালের আগ পর্যন্ত হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় এ ইমারতটি ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করত। কিন্তু ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময় থেকে মসজিদের বহির্গমন পথ পর্যন্ত মসজিদের জন্য সংরক্ষণ এবং ভেতর আঙ্গিনায় হিন্দুদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়, বাইরের অঙ্গনকে (চাবুত্রা) হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে সেখানে কোন মন্দির ছিল না।

১৮৮৩ সালে হিন্দুরা চাবুত্রায় মন্দির নির্মাণ শুরু করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ১৮৮৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সেখানকার ডিসি মন্দির নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। রঘুবীর দাস নামে এক হিন্দু মহন্ত ফয়জাবাদ সাব-জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পন্ডিত হরিকৃষ্ণ মসজিদের বহিরাঙ্গনে চাবুত্রায় ১৭২১ বর্গফুটের একটি মন্দির নির্মাণের দাবি জানান। কিন্তু মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। ১৮৮৬ সালে মন্দির নির্মাণের আরো ২টি আপিল খারিজ হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ের এই আইনি লড়াইয়ে হিন্দুরা পরাজিত হয়। ১৯৩৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মসজিদের চারপাশের দেয়াল এবং একটি গম্বুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃটিশ সরকার তা পুনঃনির্মাণ করে দেয়।

১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পুলিশ প্রহরা থাকা সত্ত্বেও রাম-সীতার মূর্তি মসজিদের ভেতর স্থাপন করে হিন্দুরা।

১৯৪৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর অযোধ্যা পুলিশ স্টেশনে এক এফআইআর দায়ের করা হয়। তাতে বলা হয়, ৫০-৬০ জনের একটি দল মসজিদ আঙ্গিনার দরোজার তালা ভেঙ্গে অথবা দেয়াল টপকে মসজিদের ভেতরে ঢোকে এবং ভগবান মূর্তি ও সীতা-রামের ছবি স্থাপন করে। এরপর ৫-৬ হাজার উগ্রবাদী হিন্দু মসজিদে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করে এবং ধর্মীয় শ্লোগান দেয়। সেখানে পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

১৯৫০ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক আদালতে দু’টি ল স্যুট করেছিলেন। এর মধ্যে একটি করা হয়েছিল ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে। এ বিষয়ে বিচারিক আদালত একটি অন্তবর্তী নির্দেশনা দিয়েছিলেন আর তা হলো- যেখানে মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল সেখানেই থাকবে তবে, আঙিনা তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং সেখানে ভক্তদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

১৯৫৫ সালে এ নির্দেশনা হাইকোর্ট নিশ্চিত করেছিল। এরপর ১৯৮৬ সালে রাজিব গান্ধি সরকারের এক সিদ্ধান্তে মসজিদের আঙিনার তালা খোলা হয় এবং সেখানে ভক্তদের জন্য বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়।

হাইকোর্টের স্থিতি অবস্থা এবং রাজিব গান্ধি সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা সহজ হয়। কিন্তু, উত্তর প্রদেশ সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং বার বার মসজিদ রক্ষার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, তারা তাদের সেই কথা আর রাখেননি।

পরবর্তীতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অ্যাকুইজিশন অব সারটেইন এরিয়া অ্যাট অযোধ্যা অ্যাক্ট নামে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এক সময় যেখানে বাবরি মসজিদ অবস্থিত ছিল সেখানকার নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয় সরকার।

সুপ্রিমকোর্টও অধিগ্রহণের বিষয়টি সমর্থন করে। এর ফলে, হয়তো অযোধ্যা পরিস্থিতির কিছুটা সামাল দেয়া গিয়েছিল কিন্তু, ভারতের বহু জায়গায় বিশেষ করে মুম্বাইসহ বেশ কিছু জায়গায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে বাবরি মসজিদ মামলা নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনো বেঞ্চের রায় সম্মানের সঙ্গে মেনে নেয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেওবন্দের দারুল উলুম মাদরাসা।
এবং ভারতে অযোধ্যা কমপ্লেক্স সংক্রান্ত রায়ে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের শান্ত ও সংযমী থাকার আবেদন জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

উল্লেখ্য, এলহাবাদের হাইকোর্টের রায়ে নিশ্চিতভাবে মুসলমানদের ঠকানো হয়েছে যেখানে একজন বিচারপতি স্পষ্টতই বলেছেন যে, বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির ছিলো না। সেখানে দুই ভাগ জমি হিন্দুদের দেয়া বিচারপতির বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রদত্ত রায় বেশামাল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন