শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭

১লা এপ্রিল বা এপ্রিল ফুলের হৃদয় বিদারক ইতিহাস


----------------------------------------------------
এদিন কাফির-মুশরিকরা মুসলমানদেরকে চরম মিথ্যা, প্রতারণা ও ধোঁকা দিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করেছে |
মুসলমান নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে গাফিল থাকার কারণেই আজকে বিধর্মীদের ষড়যন্ত্রে চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছে |
.
প্রতি বৎসর ১লা এপ্রিলের নামে বাড়িতে-বাড়িতে, পাড়া-মহল্লায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ে ঠকিয়ে প্রতারণা করে পহেলা এপ্রিল পালন করে থাকে | নাউযুবিল্লাহ! এ প্রতারণার আনন্দকে তারা পহেলা এপ্রিলের আনন্দ মনে করে থাকে এবং মুখেও তা উচ্চারণ করে থাকে | নাঊযুবিল্লাহ! অথচ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয় |’ আরো ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে |”
.
পহেলা এপ্রিলে যারা ধোঁকা দিয়ে কৌতুক করে বা অপরকে ঠকানোর আনন্দে বিভোর হয় তারা শুধু মিথ্যা ও প্রতারণার মতো হারাম ও শক্ত কবীরা গুনাহর দ্বারাই কঠিন গুনাহগারে পরিণত হয় না, পাশাপাশি তারা এদিনে লাখ-লাখ মুসলমান শহীদকারীদের দলেও নিজেদের নাম লেখায় | মুসলমান নামধারণ করে মুসলমানদের শহীদ করাতে নিজেদের সমর্থন ও আনন্দ প্রকাশ করে | মুসলমানদের শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় | নাঊযুবিল্লাহ!
.
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “পৃথিবীর এক প্রান্তে যদি কেউ নেক কাজ করে এবং অপর প্রান্ত থেকে তা সমর্থন করে তবে সে সমান নেকী পাবে | আবার এক প্রান্তে যদি কেউ গুনাহ করে অপর প্রান্ত থেকে কেউ তা সমর্থন করে তারও সমান গুনাহ হবে |”
.
মুসলমানরা আজ ইলম চর্চা হতে অনেক দূরে | মুসলমানরা নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বড়ই বেখবর | আজ মুসলমানরা নিজেদের স্বর্ণযুগ, সারা বিশ্বব্যাপী তাদের বিস্তীর্ণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুই জানে না | আবার অপরদিকে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কাফির-বিধর্মীরা যে মুসলমানদের উপর কতো মর্মান্তিক যুলুম করেছে, নির্মমভাবে শহীদ করেছে সে খবরও মুসলমান জানে না | পহেলা এপ্রিলে এমনি ধরনের এক নির্মম কাহিনী রয়েছে | যাতে লাখ-লাখ মুসলমানের নির্মমভাবে শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে |
.
গল্পে পড়েছি কোন এক বাদলা দিনের অপরাহেৃ ছেলেরা দলবেধে পুকুরে বেঙদের ঢিল ছুঁড়ে আনন্দ উপভোগ করছিল | বেঙের দল প্রতিবাদ করে বলেছিল ঢিল ছোঁড়া তোমাদের খেলা হলেও আমাদের জন্য উহা মৃত্যুর কারণ | April fool এর ঘটনাটি ইতিহাসের দৃষ্টিতে আলোচনা করলেও দেখা যাবে যে, মুসলমানদের জন্য আন্দদায়ক নয় বরং মুসলমানদের জন্য ভাষাহীন বেদনাদায়ক |
.
পৃথিবীর ইতিহাসে কোন রাজ শক্তিই যতবড় শক্তিশালী ও পরাক্রমশালীই হোকনা কেন কোন দেশে চিরস্থায়ী হতে পারেনি | ইউরোপের গথ শাসকরাও তাই পারেনি তাদেরে শোষনমূলক নীতি দীর্ঘদিন ইউরোপে টিকিয়ে রাখতে ৭১২ সালে দামেস্কের উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের সময় স্পেনবাসীর আমন্ত্রনে তারেক বিন মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি গোপনে মুসলিম বিজয় পতাকা উত্তোলন করে | এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমান ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে চলতে থাকে ভুল বুঝাবুঝি ও শক্রতা | এতদসত্ত্বেও গথদের অলস গরিমায় যে উপদ্বীপ মৃত ও অনুর্বর হয়ে পড়েছিল, পরিশ্রমী ও সাহসী মুসলিম শাসকের স্পর্শে তা উদ্ভাবনশীল, জ্ঞানালোকিত, শিক্ষা ও সভ্যতার লীলাভূমিতে পরিনত হয়, জন্ম হয় আধুনিক ইউরোপের | মুসলমানগণ সুদীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাতশত বৎসর এখানে কৃতিত্বের সাথে রাজত্ব করেন | তাদের শাসনে ইউরোপ উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করলেও খ্রিষ্টানরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি | তারা ভিতরে ভিতরে গুমরে মরছিল আর চিন্তা করছিল কিভাবে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটানো যায় এ উপমহাদেশ থেকে | খ্রিষ্টান জগতে আশার আলো উদিত হয়ে ১৪৬৯ সালে দুই মুসলিম বিরোধী খ্রিষ্টান শক্তি আরাগানের ফার্ডিনান্ড ও কাস্টাইলের ইসাবেলার বিবাহ বন্ধনে খ্রিষ্টান জোট সৃষ্টির মাধ্যমে | এই খ্রিষ্টান জোট প্রথমেই মুসলিম সভ্যতা নিশ্চিহ্ন করার দৃঢ় সংকল্প নেয় | এই সংকল্পের ফলশ্রুতিতে মুসলিম সুলতান বোয়াবলিদের দূর্বলতার কারণে এক অকস্মাৎ আক্রমনাত্মক অভিযানের দ্বারা গ্রানাডা রাজ্যের প্রবেশদ্বার বিখ্যাত মুসলিম দুর্গ আল-হামারার পতন ঘটায় | খ্রিষ্টানরা মুসলিম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে | অসংখ্য অসহায় বালক-বালিকা, বৃদ্ধ-শিশু ও নারীর রক্তে শানিত কৃপান রঞ্জিত করে পরম তুষ্টি লাভ করে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা দম্পতি | আল-হামারা দূর্গের পতনের দীর্ঘ দশ বছর পরে ফার্ডিনাল্ড গ্রানাডা রাজ্য তাদের হাতে সমর্পনের নির্দেশ দেয় মুসলিম সুলতানকে | অপমানজনক এ আদেশ মুসলিম সুলতান প্রত্যাখ্যান করেন | এতে চল্লিশ হাজার পদাতিক ও দশ হাজার খ্রিষ্টান সেনার আক্রমনে শেষ বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি মুসা বিন গাজান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর বাহিনী পরাজিত হন |
.
বিজয়ী ফার্ডিনান্ড দম্পতি পরাজিত মুসলিম সৈন্যদের সন্ধির টোপে আবদ্ধ করে তাদেরকে অস্ত্রমুক্ত করে | কিন্তু তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন সেনাপতি মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি এ সন্ধিকে মরন টোপ বুঝতে পেরে সন্ধি শর্তে আবদ্ধ না হওয়ার জন্য স্বপক্ষীয় সেনাদল ও জনগণকে এক তেজস্বীনি ভাষনে ভয়াবহ ভবিষ্যত পরিনতির ইঙ্গিত দান করেন | কিন্তু তার অবশ্যম্ভাবী পতনের আশংকায় মুসলমানগণ তার এই গুরুত্বপূর্ণ ভাষনের কোন মর্যাদা দেয়নি | তাই তিনি উপায়ন্তর না দেখে এলাভিরা তোরন দিয়ে আশ্বারোহনে নগর ত্যাগের সময় ওত পেতে থাকা দশজন খ্রিষ্টান অশ্বারোহীর দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধ করতে করতে তাদের কয়েকজনকে হতাহত করেন এবং নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হন | অবশেষে শত্রু হাতে বন্দী হওয়ার চেয়ে শেনিল নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে চির শান্তি লাভের পথ বেছে নেন | সেনাপতি মুসা বিন নুসাই রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শৌর্যে ৭১২ সালে স্পেনে যে মুসলিম রাজ্যের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত হয় তারই সোচনীয় পরাজয় ঘটে ৭৮০ বছর পরে ১৪৯২ সালে একই নামে সেনাপতি মুসা বিন গাজান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনাবসানে |
.
ধর্মের আবরনে আচ্ছাদিত ফার্ডিনান্ড দম্পতি মুসলমানদের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি ভঙ্গ করে গোপনে ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধ ঘোষনা করে | শক্র বেষ্টনে আবদ্ধ মুসলমানগণ বৃথা উত্তেজিত হয়ে অত্যাচারের স্টীম রোলারে নিস্পেসিত হয় | ফার্ডিনাল্ড আদেশ জারি করে মসজিদগুলোকে নিরাপদ ঘোষনা করে | এ আদেশে আরো বলা হয় যে, যারা মসজিদে আশ্রয় নিবে তারা নিরাপদ থাকবে, অসংখ্য স্পেনীয় মুসলমান সরল বিশ্বাসে মসজিদগুলোতে আশ্রয় গ্রহন করে আবদ্ধ হয় | শক্রর দল মসজিদগুলিকে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয় অবশিষ্ট স্পেনীয় মুসলমানদের | আর বাইরে থেকে যালিম খ্রিস্টনরা উল্লাসভরে কৌতুক করে সমস্বরে Fool! Fool!! (ফুল, ফুল) বলে অট্টহাসি আর চিৎকারে মেতে উঠে | দিনটি ছিলো পহেলা এপ্রিল ১৪৯২ ঈসায়ী সন | অদ্যাবধি প্রতারক খ্রিস্টানরা তাদের সেই শঠতার স্মরণে ধোঁকা বা প্রতারণার দিবস হিসেবে পালন করে ‘এপ্রিল ফুল’ | আর এটাই হচ্ছে পহেলা এপ্রিল বা এপ্রিল ফুলের হৃদয় বিদারক ইতিহাস |
.
খ্রিস্টানদের জন্য এদিনটি পালনীয় হলেও মুসলমানদের জন্য ভাষাহীন বেদনাদায়ক | কেননা মুসলমানদেরই হাতে গড়ে উঠা একটি সভ্যতা বর্বর অসভ্য যালিম খ্রিস্টানদের নির্মম প্রতারণায় ভেসে যায় লাখ লাখ মুসলমানদেরই বুকের তাজা রক্ত স্রোতে | কাজেই এদিনের ইতিহাস থেকে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- হাক্বীক্বীভাবে ইহুদী-খ্রিস্টানদের ইসলাম বিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব সম্পর্কে শিক্ষা নেয়া | তাদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে | তাদের প্রতিহতকরণে জজবা পয়দা করতে হবে | পাশাপাশি প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য অবশ্যই, নিজেদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং পহেলা এপ্রিল বা এপ্রিল ফুলসহ সর্বপ্রকার বিজাতীয় নিয়মনীতি পালন করা থেকে বিরত থাকা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন